জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছে। এ অবস্থায় গত সোমবার থেকে শুরু হয় বার্ষিক পরিক্ষা। এ উপজেলার ৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরিক্ষার কথা বিবেচনা করে ৬৬ টি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা পরিক্ষা নিচ্ছে, তবে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পরিক্ষা নিচ্ছেনা এবং প্রধান শিক্ষকদের পরিক্ষা পরিচালনায় সহযোগীতা করছেন না। নিরুপায় হয়ে সেই সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা একাই পাঁচটি শ্রেণির পরীক্ষা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। সহকারী শিক্ষকবিহীন পরীক্ষার হলে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁপাগাছী হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দিয়ল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের দুই শিফটে একাই সব কয়টি শ্রেণী কক্ষের পরীক্ষা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষকরা। এতে ফাঁকা পরীক্ষার হলে একে অপরের খাতা দেখে লেখাসহ শিক্ষার্থীদের বিশৃঙ্খলা করতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে বার্ষিক পরীক্ষার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা বলছে, বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষাকে দাবি পূরণের ট্রাম্পকার্ড (কার্যকরী কৌশল) হিসেবে ব্যবহার করে তাদের দাবি আদায়ের চেস্টা করছে। শিক্ষকরা দাবি দাওয়া থাকতে পারে কিন্তু শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তারা এটা করতে পারে না। বার্ষিক পরিক্ষার কথা চিন্তা করে তারা পরিক্ষার পর আন্দোলন করতে পারতো। আমাদের সন্তানদের ভবিষৎ নিয়ে চিন্তায় আছি।
সহকারী শিক্ষকরা জানান, সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি। এই তিন দফা দাবিতে আমাদের আন্দোলন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে আমাদের কর্মবিরতি চলছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
চাঁপাগাছি হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিগার সুলতানা বলেন, আমাদের তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মসুচি চলছে এজন্য আমরা পরিক্ষা পরিচালনা করছিনা। আমাদের দাবি দাওয়া মেনে না নেওয়া হলে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার স্কুল গুলোতে সর্বাত্মক শাটডাউন করা হবে।
অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক, সহকারী শিক্ষকরা কয়েকদিন থেকে আন্দোলন করছে, এর সাথে যুক্ত হয়েছে পরিক্ষা বর্জন। পরিক্ষা বর্জনের বিষয়ে আমি এক মত নয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আমি একক ভাবে পরিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আক্কেলপুর শাখার সাধারন সম্পাদক শামীম আহম্মেদ বলেন, আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে, কোমলমতি শিশুদের বার্ষিক পরীক্ষার সময় আন্দোলন করা। কিন্তু আমরা নিরুপায়। সরকার আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে এখন তা বাস্তবায়ন করছে না। আমাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ করছি।
আক্কেলপুর সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এমদাদুল হক বলেন, আমরা স্কুলগুলো পরিদর্শন করছি, এ উপজেলায় এক যোগে ৬৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৩টি স্কুলে সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতি করছে। সেখানে প্রধান শিক্ষকগন পরিক্ষা নিচ্ছেন। যারা কর্মবিরতি করছে তাদের তথ্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জেছের আলী বলেন, আমরা বিষয়গুলো পর্যবেক্ষন করছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কেকে/ এমএস