গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়নের আজমতপুর গ্রাম এখন পরিচিতি পাচ্ছে ‘জৈব সারের গ্রাম’ হিসেবে। রাসায়নিক সারের বাড়তি দাম ও মাটির ক্ষয় ঠেকাতে কৃষকরা ঝুঁকছেন কেঁচোর বিষ্ঠা থেকে তৈরি জৈব সার—ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের দিকে।
কৃষিতে উপকারি এই সার যেমন জমির উর্বরতা বাড়াচ্ছে, তেমনি অনেক পরিবারেও তৈরি করছে নতুন আয়-উৎস।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পুরো গ্রামজুড়ে বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিট। কোথাও মাটির নালা, কোথাও রিং-পদ্ধতি—সবখানে চলছে গোবর গ্যাসমুক্ত করে কেঁচো ছাড়ার কাজ। পচা গোবর খেয়ে কেঁচো যে মল ত্যাগ করে, মাত্র ৩৫–৪০ দিনের মধ্যেই তা হয়ে ওঠে বাজারজাতযোগ্য পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ জৈব সার। এখন গ্রাম থেকে প্রতি মাসে এক টনের বেশি সার বিক্রি হচ্ছে।
গ্রামে এ পরিবর্তনের সূচনা করেন স্থানীয় কৃষক কামরুজ্জামান শেখ। নিজের জমির জন্য সার তৈরি করতে গিয়ে যে পথচলা শুরু, এখন তা তার পরিবারের ভরসার জায়গা। বাড়ির পাশে স্থাপিত সিমেন্টের হাউজ ও রিং-বেডে চলছে নিয়মিত উৎপাদন। প্রতি কেজি ভার্মি কম্পোস্ট ১৫–২০ টাকায় আর প্রতিকেজি কেঁচো দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কামরুজ্জামানের ১৪ বছরের ছেলে আশিকুর রহমান জানায়, বাবার সার বিক্রির টাকাতেই চলছে তাদের পড়াশোনা ও সংসার। বড় ভাইসহ দুজনই বাবাকে সহযোগিতা করছে। আজমতপুরেই নয়, জাঙ্গালিয়ার শেফালী বেগম, শফিকুল ইসলাম, মোক্তারপুরের আমান উল্লাহ, নরুনের ফকির মো. মোস্তফাসহ আরো অনেকেই এখন এই জৈব সার উৎপাদনে যুক্ত হয়েছেন। স্থানীয় রাসায়নিক সারের দোকানগুলোতেও পৌঁছে যাচ্ছে এসব সার।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম জানান, ভার্মি কম্পোস্ট মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায়, বায়ু চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং লবণাক্ততা কমায়। রাসায়নিক সারের তুলনায় এটি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব। উপজেলায় বর্তমানে ১২টি প্রদর্শনী চলছে, নতুন কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে সেপারেটর মেশিন, পলিব্যাগ ও সিলিং মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা।
আজমতপুর গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন খান বলেন, “রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীলতা কমে গেছে। জমির মাটিও আগের তুলনায় অনেক ভালো।” একই গ্রামের কৃষক মহসিন জানান, “কম খরচে উচ্চমানের সার পাওয়া যাচ্ছে। এতে আয়ও বাড়ছে।”
কৃষক-নির্ভর এ উদ্যোগ এখন গ্রামটিকে বদলে দিচ্ছে দ্রুত। স্থানীয়দের প্রত্যাশা—ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আজমতপুর শিগগিরই দেশের ‘ভার্মি কম্পোস্টের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত হবে।
কেকে/লআ