বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫,
২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: আন্দোলনরত শিক্ষকরা কাজে না ফিরলে আইনি ব্যবস্থা      রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসিকে তফসিল দেওয়ার আহ্বান নাহিদের      খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা      অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করতে হবে : উপদেষ্টা ফরিদা      প্রবাসীরা ৬০ দিনের বেশি দেশে থাকলে ফোন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে      এভারকেয়ারের পাশে সেনা-বিমান বাহিনীর মহড়ায় বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ      শীত নিয়ে দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর      
দেশজুড়ে
ফাটল ধরে ঝুঁকিতে মতলব সেতু, মরণফাঁদে লাখো মানুষ
সুমন আহমেদ, মতলব (চাঁদপুর)
প্রকাশ: সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৮:২৭ পিএম আপডেট: ০১.১২.২০২৫ ৮:৩১ পিএম
মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত মতলব সেতুর মাঝে জয়েন্টে ফাটল ও দুপাশের ভেঙে যাওয়া রাস্তা | ছবি : খোলা কাগজ

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত মতলব সেতুর মাঝে জয়েন্টে ফাটল ও দুপাশের ভেঙে যাওয়া রাস্তা | ছবি : খোলা কাগজ

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার সংযোগস্থল ‘মতলব সেতু’র মাঝখানে জয়েন্টে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে। গত ২১ নভেম্বর  সারাদেশে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি এখন মতলব সেতুটিও ক্ষতির কবলে পড়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। 

সেতুর দুপাশের রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে নিচের মাটি-বালু সরে গিয়ে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সেতুর কোথাও উঠে গেছে কংক্রিট, বেরিয়ে পড়ছে রড। প্রতিদিন চলাচল করছে ছোট-বড় হাজার হাজারো যানবাহন। চালকসহ যাত্রীরা আছে আতঙ্কে। সেতু পারাপার হচ্ছে উৎকণ্ঠার মধ্যে। সেতুটি বর্তমানে মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। এমন অবস্থায় ঘটতে পারে যেকোনো সময় বড় বিপদ।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে ফাটল চোখে পড়ে। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটি কম্পন সৃষ্টি হয়। সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে হয়েছে বড় গর্ত। গর্ত যেনো মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। সংস্কারসহ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।

চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলা নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও কুমিল্লার লাখো মানুষ ঢাকায় নিয়মিত যোগাযোগের জন্য এ সেতু ব্যবহার করেন। প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন এই সেতু দিয়ে চলাচল করে। সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লে বিকল্প সড়ক না থাকায় জনভোগান্তির সৃষ্টি হবে।

জানা যায়, মতলব উত্তর ও দক্ষিণের সরাসরি যোগাযোগ এবং চাঁদপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে প্রকল্প হাতে নেয় চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সেতু নির্মাণে ৮৪ কোটি টাকার মধ্যে মূল সেতুর ব্যয় ৫৬ কোটি টাকা ও জমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় ২৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে আরও ৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর মতলব বাজারের পূর্বপাশে সেতুটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। সেতুতে ১০.২৫ মিটার প্রস্থের ৭টি স্প্যান রয়েছে এবং দুপাশের অ্যাপ্রোচ সড়কটি ১.৮৬ কিলোমিটার।

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়ে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে পরে নির্মাণ ও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ ২০১৮ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হয় এবং সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত মতলব সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে ফাটল ও দুপাশের ভেঙে যাওয়া রাস্তা | ছবি : খোলা কাগজ

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত মতলব সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে ফাটল ও দুপাশের ভেঙে যাওয়া রাস্তা | ছবি : খোলা কাগজ


স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, “গত ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে সেতুর মাঝ দিয়ে ফাটল দেখা দিছে সম্ভবত। ভূমিকম্পের পূর্বে এরকম ছিল না। সেতু পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানাই।”

আরেক বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, “জরুরি সেবা, শিক্ষার্থী, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ সাধারণ ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে প্রতিদিন।”

পথচারী কামরুল হাসান বলেন, “সেতুর উত্তর পাশের রাস্তার বেহাল দশা। এই রাস্তাটি পুরোপুরি ভেঙে গেলে সেতু থেকেও কোনো লাভ নাই। অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন জীবনে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব।”

গাড়ি চালক চালক আশরাফ আলী বলেন, “এত অল্প সময়ের মধ্যে ব্রিজটি ফাইটা গেছে। ব্রিজে উঠার রাস্তাও অনেক খারাপ। মেরামত করা জরুরি।”

কলেজ শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, “সেতুর অবস্থা খুবই ভয়ংকর। আমরা জানি না কখন কী ঘটে। তারপরও জীবন হাতে নিয়ে প্রতিদিন পার হতে হচ্ছে।”

স্থানীয় সবুজ বেপারী বলেন, “সেতুর মাঝখানে ফাটল এবং দুপাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে বড় গর্ত হয়েছে। মানুষের জীবন ও গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থা রক্ষায় অবিলম্বে সেতুটি মেরামত করা এখন সময়ের দাবি।”

স্কুল শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, “প্রতিদিন আমি এই সেতু দিয়ে আসা যাওয়া করি। কোনো ভারী গাড়ি পারাপার হলে কাঁপতে থাকে। ঝুঁকি নিয়েই এই সেতু দিয়ে চলছে লাখো মানুষ।”

ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান গোলাম নবী খোকন খোলা কাগজকে বলেন, “এই সেতু বন্ধ হলে আমাদের ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় যাতায়াত পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। সেতুর দুপাশের সড়ক এবং মাঝখানের ফাটল সংস্কার করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

মতলব দক্ষিণ উপজেলার ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বাবু বলেন, “এই মতলব সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ এই সেতুটি ব্যবহার করে। সেতুর দুপাশের রাস্তার বেহাল দশা।  সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত সংস্কার করার জন্য জোরালো দাবি জানাচ্ছি।”

মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন খোলা কাগজকে বলেন, “জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটি সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত জানানো হবে।”

চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহ. আলিউল হোসেন খোলা কাগজকে বলেন, “মতলব সেতুর জয়েন্টে ফাটল এবং সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে এরকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।”

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  সেতুতে ফাটল   ঝুঁকিতে মতলব   মরণফাঁদে লাখো মানুষ   মরণফাঁদ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

হামজা-শমিতদের ম্যাচ থেকে ৪ কোটির বেশি আয় বাফুফের
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে যোগ দিলেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩
দশমিনায় মৎস্য মেরিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

সর্বাধিক পঠিত

বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বান্দরবানে প্রার্থনা সভা
ফটিকছড়িতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান
সাভারে টিভি সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরসি'র আত্মপ্রকাশ
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
বিএনপি নেতার পুকুরে বিষপ্রয়োগ

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close