দীর্ঘ চার দিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে অবশেষে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে ভুটানের ট্রানজিট পণ্যবাহী কার্গো গাড়ি।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ‘রোড পারমিট’ পাওয়ায়, কার্গোটি বাংলাদেশের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। এরমধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলো, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।
গত শুক্রবার বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানের পণ্য পরিবহনের প্রথম ‘ট্রায়াল রান’ শুরু হয়। তবে পণ্যবাহী কার্গো ট্রাকে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় ভারতীয় অনুমতি পেতে জটিলতা দেখা দেয়। চার দিনের অপেক্ষায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিলেও দ্রুত কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগে সমস্যার সমাধান করা হয়। সাপ্তাহিক ছুটির কারণেও কার্যক্রম বিলম্বিত হয়।
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, নথিপত্রের ত্রুটি সংশোধনের পর সন্ধ্যায় ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এই চালানের জন্য রোড পারমিট প্রদান করে।
কার্গোর চালক আলমগীর হোসেন বলেন, “সন্ধ্যায় ভারতে প্রবেশ করে কার্গোটি ভারতে পৌঁছার জন্য নিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি এর মাধ্যমে নতুন ব্যবসা সূচনা তৈরি হবে।”
দেলোয়ার হোসেন বলেন, “প্রয়োজনীয় নথিপত্রের ত্রুটি সংশোধন করে আমরা দ্রুত ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করি। অনুমতি পাওয়ার পরপরই কার্গো গাড়িটি ভারতের পথে যাত্রা শুরু করেছে, যা এরপর ভুটানের গন্তব্য ফুয়েন্টশোলিং এর উদ্দেশ্যে রওনা হবে। আশা করি, ট্রানজিট সফলভাবে সম্পন্ন হবে।”
এর আগে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের পরই এই ট্রায়াল রান শুরু হয়, যা এর গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। পরীক্ষামূলক এই চালানটি ৬ দশমিক ৫ টন খাদ্যসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য—শ্যাম্পু, শুকনো পাম ফল, আইস টি, চকলেট ও জুস—বহন করছে।
এই ট্রানজিট ২০২৩ সালের ২২ মার্চ স্বাক্ষরিত ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। স্থলবেষ্টিত ভুটান এতদিন কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের ওপরই নির্ভরশীল ছিল।
এদিকে থাইল্যান্ডের ল্যাম চাবাং বন্দর থেকে কার্গোটি প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। সেখান থেকে সড়কপথে প্রায় ৬৮৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এটি বুড়িমারী স্থলবন্দরে পৌঁছায়। এরপর চ্যাংড়াবান্ধা হয়ে ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানের ফুয়েন্টশোলিং–এ পৌঁছাবে।
এই ট্রানজিট পথে বাংলাদেশ সরকার টোল, এসকর্ট ফি ও বিভিন্ন চার্জ বাবদ রাজস্ব পাবে, যা দেশের অর্থনীতিতে নতুন আয়ের উৎস তৈরি করবে।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ট্রায়াল রান সফল হলে ভুটান নিয়মিতভাবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার শুরু করবে। এতে ভুটানের আমদানি-রপ্তানি খরচ কমবে এবং বাংলাদেশও ট্রানজিট ফি থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে।
কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ট্রানজিট সফল হলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক যোগাযোগ আরও জোরদার হবে।
কেকে/ আরআই