সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত ও পূর্ণ রোগমুক্তির জন্য গভীর প্রার্থনা জানিয়েছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম জাতীয় কমিটির মহাসচিব ও উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই প্রার্থনা করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও দুঃখজনক। তার দ্রুত ও পূর্ণ রোগমুক্তির জন্য গভীর প্রার্থনা জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। দীর্ঘ প্রতিকূলতা, সীমাহীন চাপ ও কঠিন বাস্তবতার মাঝেও তিনি দৃঢ়তা, সাহস ও আপসহীন নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন—যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে উজ্জ্বল অক্ষরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তার সুস্থতা শুধু নিজের দলের জন্য নয়, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে ক্ষমতার ট্রানজিশনাল পর্যায়ে তার মতো অভিজ্ঞ নেত্রীর উপস্থিতি জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী আল্লাহর কাছে বেগম জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে দ্রুত সুস্থ করে দেন, তার কষ্ট লাঘব করেন এবং সর্বোত্তম ব্যবস্থার ব্যবস্থা করে দেন। তিনি খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক ‘মহাকাব্যের নারী’ উল্লেখ করে বলেন, উপমহাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে কিছু নাম যুগের পর যুগ আলো ছড়ায়—তার অন্যতম বেগম খালেদা জিয়া। তিনি শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন; বাংলাদেশের বহুপ্রতীক্ষিত গণতান্ত্রিক সংগ্রামের এক কেন্দ্রবিন্দু। তার দৃঢ়তা, নীরব শক্তি ও আপোষহীন নেতৃত্ব দেশের রাজনীতিকে বহুবার নতুন পথে নিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, রাজনীতিতে তার পদার্পণ কখনোই শুধু আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ছিল না বরং ব্যক্তিগত শোক, রাষ্ট্রীয় সংকট, ষড়যন্ত্র আর প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে টানা যুদ্ধ। স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর শোক বুকে নিয়ে তিনি রাজনীতির অগ্নিপথে প্রবেশ করেন। জীবনের বার্ধক্যে থেকেও অনুভব করেছেন প্রবাসী সন্তানের বেদনা; হারিয়েছেন আরেক সন্তানকেও।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাকে ঘিরে উঠেছিল অপবাদ, ভুল ব্যাখ্যা ও কুৎসার ঝড়। বহু বছর ধরে ভিন্নমতাবলম্বী প্রজন্মকে তাকে ঘৃণা করতে শেখানো হয়েছে। তবুও তিনি খুব কমই প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসার ভাষায় কথা বলেছেন। নীরবতাকেই বেছে নিয়েছেন শক্তি হিসেবে—এক নীরবতা যা প্রতিপক্ষকে বারবার বিস্মিত করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাজনীতিতে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় ছিল আপোষহীনতা—যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শব্দভাণ্ডারে নতুন অর্থ নিয়ে আসে। শুদ্ধতা, শালীনতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল তার রাজনৈতিক পরিচয়ের অন্যতম স্তম্ভ। তার নেতৃত্বে বিএনপি যে শিখরে ওঠে, তা অনেক বিশ্লেষকের মতে দলের সামর্থ্যের চেয়েও বেশি ছিল। দলটির অভ্যন্তরে সমপর্যায়ের নেতৃত্ব গড়ে না ওঠাকেই অনেক পর্যবেক্ষক তার রাজনৈতিক যাত্রার গভীরতম ট্র্যাজেডি হিসেবে মনে করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সময় ও পরিস্থিতি ভিন্ন হলে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেও দেশের ইতিহাসে আরেকটি অধ্যায় রচনা করতে পারতেন। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তা নিয়ে আজও গবেষণার অবকাশ রয়েছে।
বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। তার স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন—যদি বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্থান ঘটে, তবে সেটি হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক যুগের অবসান।
বিবৃতিতে শেষে বলা হয়, তার উত্থান-পতন, সংগ্রাম ও দৃঢ়তার পথচলা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার নক্ষত্রখচিত পাঠ হয়ে থাকবে—যেখানে দেখা যাবে, এক নারী কীভাবে পুরো জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখাতে পারে।
কেকে/ আরআই