ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিয়ের অন্যতম আচারব্যঞ্জক অলঙ্কার ‘বিয়ের মুকুট’ তৈরি করে জীবিকা চালাচ্ছেন মিঠুন কুমার শীল। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এই কারুকর্মকে কেন্দ্র করে তার ছোট কারখানায় তৈরি হচ্ছে শত শত মুকুট, যা বিক্রি হচ্ছে ফরিদপুর ছাড়িয়ে আশপাশের জেলাগুলোতেও। মিঠুনের দক্ষ হাতে গড়া এসব মুকুট এখন এলাকার বেশ কয়েকজনের কর্মসংস্থানের উৎস।
রোববার (২৩ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বিল সরাইলে মুকুট তৈরির কারিগরি মিঠুন শীলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন মহিলা বসে মুকুট তৈরি কাজ করছেন।
জাবেদা নামে এক বৃদ্ধা মহিলা বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক বছর ধরে মুকুটের কাজ করি। এ থেকে যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে নিজের চাহিদা মিটিয়ে কিছু টাকা জমা হয়। এভাবে জীবন চলে যাচ্ছে।’
পারভীন বেগম নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশে এই মুকুট তৈরির কাজ হয়। আমি প্রায় ৬-৭ বছর ধরে এই মিঠুন দাদার বাড়িতে মুকুট তৈরির কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।’
উর্মি নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘মুকুট তৈরি করে যা উপার্জন হয়, তাতে বেশ ভালো আছি। নিজের চাহিদা মিটিয়ে পরিবারে কিছু টাকা দিতে পারি।’
একই এলাকায় আলাল সেখ (৬৫) বলেন, ‘মিঠুনের বাবাও মুকুট তৈরির কাজ করতেন। বাবা মারা যাওয়া পর মিঠুন ব্যবসায়ের হাল ধরেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে মিঠুন বেশ ভালই আছে।’
ময়না ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সেখ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘মিঠুন যে মুকুট তৈরি করে এটা বোয়ালমারী উপজেলা এমনকি জেলার মধ্যে আর কেউ তৈরি করে কি না জানা নেই। মিঠুনের তৈরি মুকুট পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বিক্রি হয়।’
বোয়ালমারী নিউমার্কেটে অবস্থিত দত্ত বিপণীর স্বত্বাধিকারী দেবু দত্ত বলেন, ‘মিঠুনের তৈরি মুকুট গুণগত মান অনেক ভালো। ঢাকা থেকে যেসব মুকুট বিক্রির জন্য আনা হয়, সেগুলো থেকে মিঠুনের তৈরি মুকুটের চাহিদাও অনেক বেশি।’
মুকুট তৈরির কারিগর মিঠুন কুমার শীল বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমার মুকুট তৈরির কাজ করে শিখেছি। প্রায় ২৫ বছর ধরে এই কাজের সাথে সংশ্লিষ্টতা আমার। আমার তৈরি মুকুট ফরিদপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলা মাগুরা, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিক, মুকুট তৈরির আনুষঙ্গিক বাদ দিয়ে প্রতিটি মুকুটে লাভ থাকে ৫০-৮০ টাকা। প্রতি মাসে আমার কারখানা থেকে ৩০০-৪০০টি মুকুট তৈরি কারা হয়। কারখানায় ২৫০-১২৫০ টাকার মুকুট আছে। মুকুট তৈরিতে ব্যবহার হয় ককসিট, চুমকি, পুথি, লেস, আঠা, স্টন, রংসহ বিভিন্ন উপকরণ।’
মিঠুন শীল বলেন, ‘স্বল্প সুদে বা বিনা সুদে সরকার বা কোন এনজিও থেকে লোন পাওয়া গেলে কারখানা বড় করতে পারতাম। এতে বেশ কিছু শ্রমিকের কর্মসংস্থান হতো।’
কেকে/এমএ