বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনে কাজী রফিকুল ইসলামকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। তৃণমূলে অসন্তোষ, নিরবতা ও হতাশার কারণে আসনটি নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে, বিএনপির দীর্ঘদিনের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনটি জামায়াত মনোনীত প্রার্থী শাহাবুদ্দিনের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
দীর্ঘ ১৬ বছর স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশে না থাকা, আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, এলাকায় তেমন উপস্থিতি না থাকা—এসব কারণে প্রার্থীকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
স্থানীয়দের মতে, এমন একটি সংকটময় নির্বাচনি পরিবেশে মাঠের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে দূরে থাকা একজনকে মনোনয়ন দিয়ে হাইকমান্ড সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, “সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আছে। সবাই নিরব—এই নিরবতাই অনেক কিছু বলে দেয়। যে দুঃসময়ে নেতাকর্মীরা হামলা–মামলা মোকাবিলা করেছেন, তার মূল্যায়ন না করায় সবার মন ভেঙে গেছে।”
এ নেতা আরও বলেন, “আহসানুল তৈয়ব জাকিরসহ অনেক ত্যাগী নেতা দীর্ঘদিন মাঠে ছিলেন। অথচ যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তিনি ১৬ বছরে মাঠে ছিলেন না, তার নামে কোনো মামলা নেই। এমন সিদ্ধান্ত নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না।”
বালুয়া ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা বলেন, “২০০৬ সালের পর ১৭ বছর যিনি এলাকায় আসেননি, তাকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছাড়া তিনি কখনো আসেননি। আমাদের খোঁজখবর রাখেননি, হামলা–মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি। এ মনোনয়নে তৃণমূলের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি।”
তিনি ত্যাগী নেতাদের পূর্ণ মূল্যায়নের জোর দাবি জানান।
বালুয়া ইউনিয়ন বিএনপির আরেক নেতা বলেন, “আমরা নির্যাতনের ১৭ বছর পার করেছি—হামলা, মিষ্টি মামলা, হত্যা মামলা—সব মোকাবিলা করেছি। যে প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন তার মাঠে কোনো উপস্থিতি নেই, নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও নেই।”
এ নেতা আরও বলেন, “বহিষ্কৃতদের নিয়ে প্রোগ্রাম করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে—এমন অভিযোগ আছে। আমরা এমন ‘আওয়ামীপন্থী পূর্ণাসন’ মেনে নিতে পারি না। আমরা ধানের শীষের পক্ষেই আছি, কিন্তু হাইকমান্ড যেন ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে।”
২৩৭ আসনে মনোনয়ন ঘোষণার পর বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফলে, বগুড়া-১ আসনের নেতাকর্মীরাও আশাবাদী এই আসনটি পুনর্বিবেচনা হবে। স্থানীয়রা মনে করছেন, মাঠে থাকা, ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাদের মূল্যায়ন করলে এই আসনে বিএনপি আবারও বড় ব্যবধানে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।