আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত মাস থেকেই দেশজুড়ে ভয়াবহ অস্থিরতা বিরাজ করলেও গত কয়েকদিনে এর মাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুন প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এসব ঘটনার কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তায় চলাচলকারী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও কর্মজীবী মানুষরা মানসিকভাবে চাপের মধ্যে থাকছে। জনমনে বিরাজ করছে চাপা ভয়, আতঙ্ক। তবে সব থেকে উদ্বেগের বিষয় হলো- ‘টার্গেট কিলিং’। চট্টগ্রাম পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী খোদ চট্টগ্রামের রাউজানেই ৬টি টার্গেট কিলিং গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। গত মাসের ৭ অক্টোবর সন্ধ্যার কিছু আগে হাটহাজারীর মদুনাঘাট ব্রিজের কাছে একদল লোক প্রাইভেটকার আটকে রাউজানের ব্যবসায়ী আবদুল হাকিমকে গুলি করে হত্যা করে।
গত বুধবার চালিতাতলীতে আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। ওই হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা। গত ১৪ মাসে ৪০টির মতো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে রাউজান উপজেলাতেই ১৭টি। যার মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। সর্বশেষ গত সোমবার ১০ নভেম্বর প্রকাশ্যে ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তারিক সাইফ মামুন নামের একজন। যিনি বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের মামলায় জড়িত। এভাবে সারা দেশে এক ভয়াবহ অস্থিরতা বিরাজ করছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা এসব অস্থিতিশীলতা, টার্গেটেড কিলিং খুবই প্ল্যানমাফিকই করা হচ্ছে।
পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়েই তারা সুবিধাজনক স্থানে বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগ করছে। খুন করে পালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত ১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ও তিনটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এখনি এসব নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে দেশের অস্থিতিশীলতা আরো বাড়বে এবং জনমানুষকে পোহাতে হবে ভোগান্তি, ভুগতে হবে নিরাপত্তাহীনতায়।
অবৈধ অস্ত্রের উৎস সরকারি নথিতে থাকতে পারে- কিন্তু দ্রুত সেই রুট উন্মোচন ও অস্ত্র উদ্ধারে কঠোর তৎপরতা প্রয়োজন। না হলে এসব অস্ত্র ভোটপ্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারেও ব্যবহার হতে পারে।’
বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে নারী ও শিশু শিক্ষার্থীরা এর বাইরেও বিভিন্ন অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত সাধারণ মানুষ অনিরাপদ পরিবেশের কারণে সময়মতো পৌঁছাতে পারছে না তাদের কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন পিছিয়ে যাচ্ছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিচ্ছে। শিল্পক্ষেত্রে যাতায়াত-সংকট সরবরাহচক্রকে দুর্বল করে দেয়, যার প্রভাব পড়ে পণ্য উৎপাদন, বাজারমূল্য এবং অর্থনীতির সামগ্রিক গতিশীলতায়। দীর্ঘমেয়াদে এই অস্থিতিশীলতা দেশের উন্নয়ন কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কর্মসংস্থান-নির্ভর পরিবারগুলোর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
ফলে এখনি দরকার সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে একই প্ল্যাটফর্মে এনে একটি নিরাপত্তা কেন্দ্রিক কার্যক্রম চালু করতে হবে যেখানে অবকাঠামোর নিয়মিত তদারকি, গণপরিবহনে নজরদারি, রাস্তাঘাটে দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্তদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দেশকে একটি স্থিতিশিল ও সবার জন্য নিরাপদ রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে।
কেকে/এআর