আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের নীলনকশা চলছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করতে বাজারগুলোতে সুপরিকল্পিতভাবে জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবং সব থেকে ভয়াবহ ব্যাপার হলো ইতোমধ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েকশ হাজার কোটি টাকার জালনোট দিয়ে বাজার ছেয়ে ফেলার চক্রান্ত করছে পার্শ্ববর্তী একটি দেশ। এমন অভিযোগ যদি সত্য হয় তা আমাদের দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ভয়াবহ সংকটের জন্ম দেবে। বিষয়টি আমলে নিয়ে এরই মধ্যে সীমান্তসহ সবখানে কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছেন বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে ছড়িয়ে পড়া জালনোট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়েও দেশে জাল নোটের আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৯৭৩ সালের ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নোট বাতিল করা হয়। ১৯৭৪ সালের ৩০ মার্চ প্রতিবেশী একটি দেশ থেকে মুদ্রিত ১ টাকার মানচিত্র সিরিজের নোটটিও অচল ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদে জাল মুদ্রা প্রতিরোধে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ পাস করা হয়।
নির্বাচনের আগেই বড় অঙ্কের জালনোট বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে পার্শ্ববর্তী দেশে তৈরি করা হচ্ছে ২০০, ৫০০ ও ১ হাজার টাকার জালনোট। যার সঙ্গে দেশের টাঁকশালে ছাপা ও বাজারে প্রচলিত নোটের নিখুঁত মিল রয়েছে। বছরের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ২০টি অভিযান পরিচালনা করে ১৭ কোটি ৪৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৫ টাকা, ১৭ হাজার ৪০০ ডলার, ২০ হাজার ইউরো, ১৯ হাজার ৯০০ দিরহাম ও ২৯ হাজার ৬০০ সৌদি রিয়াল নোট জাল উদ্ধার করা হয়। এ সময় ৪৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু থেমে নেই জাল নোটের বিস্তার। জালনোট বিস্তার রোধে আরো সক্রিয় হতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। জাল নোটের উৎস, প্রবাহ ও ব্যবহার রোধে কঠোর নজরদারি চালাতে হবে। জাল টাকার ঝুঁকি এড়াতে এবং জনগণকে সতর্ক থাকতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চারটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে; সেগুলোকে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে।
ব্যাংকগুলোতে জালনোট শনাক্তকারী মেশিনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং এই মেশিনগুলোর সক্ষমতা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। নগদ টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের (মোবাইল ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট) ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে জাল টাকার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে। একই সঙ্গে দৈনিক যেখানে বেশি টাকা পয়সার লেনদেন হয় সেখানেও জাল টাকা শনাক্তকারী মেশিন রাখতে হবে। বড় অঙ্কের লেনদেন সব সময়ই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করা উচিত। জাল টাকা তৈরি, সংরক্ষণ ও বিতরণে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান কঠোর আইনগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্যরা এমন অপরাধে জড়াতে ভয় পায়। কোনো সন্দেহজনক নোট পেলে বা জাল টাকা তৈরি চক্রের সন্ধান পেলে তা গোপন না রেখে তাৎক্ষণিকভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো নাগরিক দায়িত্ব।
জাল টাকা রোধ কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এটি একটি সম্মিলিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় চ্যালেঞ্জ। জাল টাকা প্রতিরোধে সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি জনসচেতনতা এবং সতর্কতা অপরিহার্য। সবাই মিলে সতর্ক থাকলে এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব, তাতে দেশের অর্থনীতিও কিছুটা হলেও নিরাপদ হয়।
কেকে/এআর