হবিগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মঈন চৌধুরী সোহেল কর্তৃক সংবাদ সম্মেলনে মৌলভীবাজারকে “বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার” হুমকির প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো মৌলভীবাজার জেলা।
গত (৭ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এই উত্তেজনা রোববার (৯ নভেম্বর) গণঅবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আরও বেগ পায়।
দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে অনুষ্ঠিত এ গণঅবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, অটোরিকশা চালক সমিতি এবং সর্বস্তরের মানুষজন।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জেলা পরিবহন শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম রসিক, জেলা অটোরিকশা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম, কুলাউড়া বাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম আনছার, মৌলভীবাজার জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব, জেলা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তোয়েল, সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার মিয়াসহ অনেকে।
প্রসঙ্গত, গত ১ নভেম্বর মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল–মৌলভীবাজার–সিলেট রুটে বিরতিহীন বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন সাবেক এমপি এম নাসের রহমান। ওইদিন হবিগঞ্জ-সিলেট বিরতিহীন বাস সিলেটের দয়ামীরে দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হন। এ ঘটনায় নাসের রহমান মন্তব্য করেন, “হবিগঞ্জ রুটে পুরোনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলায় দুর্ঘটনা বাড়ছে, তাই এ ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে।”
তার এই মন্তব্যের জেরে হবিগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মঈন চৌধুরী সোহেল সংবাদ সম্মেলনে মৌলভীবাজারকে “বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার” হুমকি দেন।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় মৌলভীবাজারের পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। রোববার সকাল ১১টায় মৌলভীবাজার শহরের বেরিরপার এলাকায় সড়ক অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে দুই জেলার নেতারা আলোচনার আশ্বাস দিলে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব জি কে গউছ যোগাযোগ করেন মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন এবং জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের সঙ্গে।
অবস্থান কর্মসূচির সমাবেশে ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, “আইন অনুযায়ী হবিগঞ্জের গাড়ি মৌলভীবাজারে যাবে, মৌলভীবাজারের গাড়ি হবিগঞ্জে যাবে—এটাই নিয়ম। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। উত্তেজনা নয়, আলোচনার মাধ্যমেই সব সমাধান হবে।”
তিনি আরও বলেন, “মৌলভীবাজারবাসী ধৈর্য ধরুন, আমাদের আলোচনা সফল হবে। মনে করুন, সমাধানের পথে আমরা অনেকটা এগিয়ে গেছি।”
জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম রিপন বলেন, “আজকের অবস্থান চলাকালে হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ আমাদের জানিয়েছেন—বিষয়টি যেন আর না বাড়ে। আমরা কটূক্তির জবাবে শান্তির বার্তা দিতে চাই।”
গণঅবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, “মৌলভীবাজারের মর্যাদাহানি কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। জেলার ঐতিহ্য ও সম্মান রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
তারা আরও বলেন, “মৌলভীবাজার একটি ঐতিহ্যবাহী ও সংস্কৃতিমণ্ডিত জেলা। এর মর্যাদা, সংস্কৃতি ও সুনাম রক্ষায় যেকোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।” বক্তারা একসঙ্গে ঘোষণা দেন মৌলভীবাজারকে হুমকি দেওয়া মানেই বাংলাদেশের ঐক্যে আঘাত। এমন উসকানি আর সহ্য করা হবে না।
কেকে/ আরআই