গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েও শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন সেবা চালু করতে পারেনি। দীর্ঘদিনের দাবি, একাধিক আশ্বাস আর নির্ধারিত তারিখ পার হলেও শিক্ষার্থীবাহী বাসের চাকা এখনও ঘোরেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর প্রথমবারের মতো মানিকগঞ্জ ও চন্দ্রা রুটে শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন সেবা চালুর ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বাস চলার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়া শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরে হওয়ায় অধিকাংশই রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি। ফলে প্রশাসনের দাবি, পর্যাপ্ত আবেদন না পাওয়ায় বাস চালু করা যায়নি।
জানা যায়, ২০২২ সালের অক্টোবরে একই রুটে বাস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সেই উদ্যোগ আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এদিকে ২০২৪ সালের জুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য সোয়া কোটিরও বেশি টাকায় দুটি ৫২ আসন বিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস কেনা হয়। অথচ শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পরিবহন সেবা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে মানিকগঞ্জ ও চন্দ্রা রুটে বাস সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত ভাড়া জমা দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করতে বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মানিকগঞ্জ রুটের মাসিক ভাড়া ধরা হয় ১,৮০০ টাকা এবং প্রথমবার অগ্রিম ৪,৫০০ টাকা। চন্দ্রা রুটে মাসিক ভাড়া ১,২০০ টাকা, অগ্রিম ৩,০০০ টাকা। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, প্রথমবার শিক্ষার্থীদের ২ মাস ১৫ দিনের অর্থ অগ্রিম জমা দিতে হবে এবং পরবর্তী তিন মাস পর পর অগ্রিম অর্থ জমা দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই ভাড়ার পরিমাণ অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য।
মানিকগঞ্জ রুটগামী আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক হাসান বলেন, “বাস ভাড়া খুব বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। মানিকগঞ্জ রুটে যদি মাসে ১,২০০ টাকা করা হতো তাহলে অনেকেই আবেদন করত। আমরা মাসে গড়ে ২০ দিন যাতায়াত করি, অসুস্থতা বা ক্লাস বন্ধের দিনেও ভাড়া দিতে হবে, এটা তো অযৌক্তিক! বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে মুনাফা নয়, তেলের খরচ উঠলেই যথেষ্ট।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে হাজিরা পদ্ধতি চালু হলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে। তখন যৌক্তিকভাবে ভাড়া নির্ধারণ করলে সবাই উপকৃত হবে।”
চন্দ্রা রুটে যাতায়াতকারী বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী দ্বীন ইসলাম রোহিত বলেন, “বাস সেবা চালু হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া, সময়ের অসুবিধা আর নির্দিষ্ট সময়েই শুধু বাস পাওয়া, এসব কারণে আমি আবেদন করিনি। আগেও দেখেছি হঠাৎ সেবা বন্ধ হয়ে যায় তাই আস্থা পাইনি।”
অন্যদিকে পরিবহন পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য স্যার পরিবহন চালুর অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু মাত্র ৫০-৫৫ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে, রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে আরও কম। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে ভাড়া বেশি, বিষয়টি উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে ভাড়া কমানো যেতে পারে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, “২ থেকে ৫ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করায় বাস চালু করা সম্ভব হয়নি। ভাড়া বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে কি না আমরা শুনেছি, কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিতভাবে জানালে বাস পরিচালনা কমিটি বিষয়টি বিবেচনা করবে।”
কেকে/ আরআই