বাড়ির পাশে আমাদের এক সুন্দর লেবু বাগান আছে। বাগানে অনেক লেবু গাছ, বিশেষ করে কাগুজি লেবু গাছ। লেবুগুলো খুব সুস্বাদু এবং টাটকা। আমাদের বাড়িতে লেবু কিনে খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ গাছের লেবু আমাদের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। তা ছাড়া পাশের পাড়া-প্রতিবেশীরাও লেবু পায়, কারণ বাগানে এত লেবু থাকে যে একাধিক পরিবার তা উপভোগ করতে পারে।
বাগানের পাশেই একটি ছোট ডোবা আছে, যা থেকে মাটি তুলে আমাদের বাড়ির জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। ডোবার পাশে একটি আম গাছ রয়েছে। গাছটি অনেক পুরোনো এবং বয়সের কারণে তার ডালপালা বেশ নুয়ে পড়েছে। এখন গাছে খুব একটা আম হয় না, দুটি-একটি আসে। গাছটি খুব উঁচু নয়, তবে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালেই ডাল ছোঁয়া যায়। গাছের গা পুরোপুরি টিউমারের মতো হয়ে গেছে, যা দেখে মনে হয় যেন গাছটি অসুস্থ। তবে গাছটির চারপাশে উঠে যাওয়া বেতগাছগুলো এক ধরনের প্রাকৃতিক শোভা এনে দেয়। আম গাছটি প্রায় বন্দি হয়ে গেছে, কারণ বেতের কাটায় যেন এটি আটকে গেছে। এ কারণে গাছের তলায় যাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে, আর পাশ দিয়ে সুরঙ্গের মতো পথ তৈরি হয়েছে, যা দিয়ে আম তলা পর্যন্ত যাওয়া যায়।
এমতাবস্থায়, বড় মানুষরা খুব একটা গাছের তলায় যান না, কিন্তু শিশুরা মাঝে মাঝে সেখানে চলে যায়। যদিও গাছে খুব বেশি আম আসে না, তবুও গাছটির আমগুলি অত্যন্ত মিষ্টি। আম কুড়ানোর লোভে শিশুরা প্রায়ই গাছের তলায় যায়। কিন্তু গাছটির বিশেষত্ব শুধু তার আমেই নয়, তার নিচের ডালে একটি ঘুঘু পাখির বাসা রয়েছে। বাসাটি মাটির কাছাকাছি, আর শিশুরা বেশ সহজেই দেখতে পায়। ঘুঘু দুটি খুব সুন্দর বাদামি রঙের এবং আকারে বেশ বড়। ঘুঘু ডিম পাড়লে, শিশুরা গিয়ে বাসাটি দেখে, কিন্তু কখনো তা নষ্ট বা ক্ষতি করে না। ঘুঘু দুটি খুব শান্ত, তাদের কোনো বিরক্তি নেই। ডিমে তা দিলে, তারা বাচ্চা ফুটিয়ে, আবার স্বাভাবিকভাবে বাসায় ফিরে যায়।
ঘুঘুদের সাথে শিশুরা এক অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি করেছে। প্রায় কয়েক বছর ধরে ঘুঘু জোড়া এখানে থাকে, ডিম পাড়ে এবং তাদের ছানাগুলো ফুটায়। শিশুরা মাঝে মাঝে ছানাগুলো ধরে দেখে, কিন্তু ঘুঘু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। তাদের মনে হয় যেন এই শিশুরা তাদের অতি পরিচিত বন্ধু। পাখিদের প্রতি এত ধরনের বন্ধুত্ব খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়। শিশুরাও ঘুঘুদের সাথে ভালো আচরণ করে এবং তারা কোনো ক্ষতি করে না।
তবে কিছু বিষয় থাকে যা কিছুটা অস্বস্তিকর। শিশুরা লেবু বাগানের ভেতর দিয়ে চলতে গিয়ে মাঝে মাঝে এক বা দুটি লেবু তুলে নিয়ে যায়। তারা বাগানের পাশের টিউবয়েল থেকে পানি নিয়ে লেবু দিয়ে শরবত তৈরি করে এবং তা খেয়ে চলে যায়। এটি একটি আনন্দময় দৃশ্য, কারণ দেখে মনে হয় যেন তারা আনন্দে মগ্ন হয়ে সেই মুহূর্তটি উপভোগ করছে।
এভাবেই ঘুঘু পাখি এবং শিশুরা তাদের জীবন কাটাচ্ছে।
কেকে/ এমএ