এক দেশে ছিল এক বিস্ময়কর ভূমি সবুজে মোড়া, নদীর কোলঘেঁষা, পাখির গানে ভরা। সেই দেশের নাম বাংলাদেশ। কিন্তু গ্রামের শিশুদের কাছে এটি কেবল একটি দেশ নয়, বরং এক রূপকথার দেশ, যেখানে সকাল শুরু হয় সূর্যের সোনালি হাসিতে আর রাত নামে জোনাকির আলোয় নেচে।
এই দেশে ছিল এক কিশোরী সাথী। তার মনে সবসময় প্রশ্ন জাগত, কেন আমাদের দেশকে রূপকথার দেশ বলা হয়? একদিন সে নদীর ধারে বসে ছিল। হঠাৎ হাওয়া এসে তাকে বলল, চলো, আমি তোমায় দেখাই তোমার দেশের রূপকথা।
প্রথমেই হাওয়া তাকে নিয়ে গেল গ্রীষ্মের দেশে আকাশে রোদের ঝলক, কাঁঠাল-আমে ভরা গ্রাম, শিশুরা গাছের ছায়ায় হাসছে। সাথী শিখল গ্রীষ্ম শেখায় কষ্টের ভেতরেও আনন্দ খুঁজে নিতে।
তারপর এলো বর্ষার রূপ আকাশজোড়া মেঘ, নদীর স্রোত, মাঠে নাচছে ব্যাঙ আর শিশুরা ছাতা ছাড়া ভিজছে আনন্দে। গ্রামের কৃষক বলল, এই বর্ষাই তো জীবন দেয়, শস্য দেয়। সাথী বুঝল পরিশ্রম আর ধৈর্যের ফসল মিষ্টি।
এরপর সে দেখল শরৎ ঋতুর সৌন্দর্য- আকাশে সাদা কাশফুল, ভেসে যাচ্ছে তুলার মতো মেঘ। মা ধানের খেতে গান গাইছে, শিশুরা পুকুরে সাঁতার কাটছে। শরৎ বলছে, মন যদি নির্মল হয়, পৃথিবীও সাদা কাশফুলের মতো সুন্দর লাগে।
এর পরের জাদু হেমন্তের সোনালি রূপ, ধান পাকে, মাঠ ভরে সোনার ঝলক। কৃষকের মুখে হাসি, শিশুর হাতে নতুন ধান। সাথী বুঝল কৃতজ্ঞতা হলো হৃদয়ের আসল আলো।
তারপর সে গেল শীতের দেশে, কুয়াশায় ঢাকা সকাল, পিঠাপুলি আর খেজুরের রসের ঘ্রাণে ভরা গ্রাম। সবাই আগুন জ্বেলে গল্প করছে, শিশুরা উষ্ণ চাদরে জড়ানো। সাথী শিখল ভালোবাসাই মানুষকে গরম রাখে, শুধু আগুন নয়।
শেষে এলো বসন্তের জাদু, ফুলে ফুলে রঙের মেলা, কোকিলের গান, নবজীবনের আহ্বান। সাথী আনন্দে নেচে উঠল, বলল, এই তো জীবন নতুন করে ফোটার নামই বসন্ত।
অচিরেই সে আবার ফিরল তার প্রিয় নদীর ধারে। আকাশে তখন সন্ধ্যা নেমেছে, জোনাকি জ্বলে, বাতাসে ফুলের গন্ধ। হাওয়া বলল, এখন বুঝলে রূপকথার দেশ কাকে বলে?
সাথী হাসল, হ্যাঁ, জানি রূপকথা থাকে প্রকৃতিতে, মানুষে, ছয় ঋতুর সুরে। এই দেশই সত্যিকারের রূপকথার দেশ- বাংলাদেশ।
কেকে/ এমএ