বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) রোগীদের জন্য আধুনিক মানের বিলাসবহুল ২২টি কেবিন ও দৃষ্টিনন্দন দুইটি পানির ফোয়ারা উদ্বোধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর কেবিন ও ফোয়ারা উদ্বোধন করেন।
জড়াজীর্ণ থেকে আধুনিকায়নে রূপান্তর করা কেবিন ও হাসপাতালের সামনের মাঠের মাঝে নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন দুইটি পানির ফোয়ারা উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একেএম মশিউল মুনীর বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল শুধু নিম্নবিত্তদের জন্য নয়, এখানে মধ্য ও উচ্চবিত্তরা সেবা নিচ্ছেন। কারণ, বেসরকারি হাসপাতালে খরচ দিয়ে মধ্য ও উচ্চবিত্তদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই, সকলের জন্য সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি মধ্য ও উচ্চবিত্তদের জন্য মান-সম্মত চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আধুনিক কেবিন ব্লকের উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে মাত্র ১ হাজার টাকা ভাড়ায় আধুনিক মানের ২২টি কেবিন চালু করা হয়েছে। কেবিনগুলোর মান বেসরকারি হাসপাতালের চেয়েও ভালো।’
সভাপতির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো বাংলাদেশের কোনো সরকারি হাসপাতালের সামনে বড় মাঠ নেই। অপরূপ সৌন্দর্যের এই হাসপাতালকে আরো দৃস্টি নন্দন করতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় উদ্বোধন করা হলো দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা। পর্যায় ক্রমে হাসপাতালের সামনের দুইটি মাঠে ফুলের বাগান, লেক, ওয়ার্ক ওয়ে আরো আধুনিকায়ন করা হবে।’
সৌন্দর্য রক্ষায় পান, চুন ও ডাব নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ না করার আহ্বান জানিয়ে মশিউল মুনীর বলেন, ‘হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা করার জন্য পান, চুন আর ডাবের খোসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক। তাই, হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধির দায়িত্ব আমাদের আর পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব সবার।’
মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলু বলেন, ‘হাসপাতাল উন্নয়নে আমরা নানামুখী কাজ করে যাচ্ছি। পূর্বের মেডিসিন ভবনটি এখন সম্পূর্ণ বহির্বিভাগ করা হয়েছে। পুরাতন ভবনটি আন্তঃবিভাগ হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে। এই ভবনে আরো ৩০০ বেড সংযোজন করা হয়েছে। এতে করে রোগীদের কষ্ট লাগব করা সম্ভব হবে।’
ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালটি বিভাগের আবাসিক সার্জন ও ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মাজহারুল রেজওয়ান রেজার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নজমুল আহসান, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মাহামুদ হাসান, সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভান্ডার) ডা. আবদুল মুনায়েম সাদ।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জড়াজীর্ণ কেবিন নিয়ে রোগীদের নানা অভিযোগ ছিল। পূর্বে হাসপাতালের পঞ্চম তলার ‘এ’ ব্লকের কেবিন গুলোর ফ্লোরের টাইলস ভাঙা, দেয়ালে ছত্রাক, ছাদের পলেস্তারা নেই, দরজা-জানালায় ছিটকানি নেই। এমনকি টয়লেটের দরজাও ছিলো না ও যা ছিলো তাও ভাঙা ছিলো। কেবিনের রোগীদের এমন অভিযোগ দূর করতে একেএম মশিউল মুনীর গত জুন মাসে সম্পূর্ণ আধুনিক মানের কেবিন তৈরির উদ্যোগ নেন। তিনি প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালের পঞ্চম তলার এ ব্লকের ২২টি কেবিন আধুনিকায়নে রুপান্তর করার উদ্যোগ নেন। প্রতিটি কেবিনে নতুন পুরাতন প্লাস্টার, দরজা ও জানালা ভেঙে নতুনভাবে প্লাস্টার করা, উন্নতমানের দরজা-জানালা স্থাপন ও দৃষ্টি নন্দন টাইলস বসানোর ব্যবস্থা করেন। বিলাসবহুল এই কেবিনগুলোতে নতুন বেড সংযোজন, বসার সোফা, এসি, পর্যাপ্ত অক্সিজেন, চেয়ার, ক্যাবিনেট সেট, দেয়াল, ঘড়ি, জামা-কাপড় রাখার র্যাক, রুম স্প্রে, পানির জগ, ওয়াটার হিটার, পানি পান করার গ্লাস, উন্নত মানের পর্দা, উন্নত মানের টাইলস সম্বলিত টয়লেট, বেসিন,হাই কমোড, টিস্যু এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নানা সুযোগ সুবিধায় ভরপুর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক এই কেবিনের ভাড়া মাত্র এক হাজার টাকা। এর সাথে রোগীর ১৭৫ টাকা পথ্য বিল দিতে হবে কেবিনের রোগীদের। দেশের পুরোনো আটটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে অন্যতম দৃষ্টিনন্দন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালটি সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিচালক নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা। মাত্র এক মাস আগে এই ফোয়ারা তৈরি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
কেকে/ এমএ