দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক সাংসদ আখতারুজ্জামান মিয়ার নাম ঘোষণা হয়েছে। এ উপলক্ষে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন একই আসনের জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী আফতাব উদ্দিন মোল্লা। বর্তমান দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতি এমন সৌজন্য প্রকাশ ইতিবাচক পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জানা যায়, আখতারুজ্জামান মিয়া বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। পূর্বে তিনি দিনাজপুর-৪ আসনের সাংসদ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এবারও তিনি এই আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে নামার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে তার সম্ভাব্য মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।
এমন সময়ে জামায়াতের আঞ্চলিক নেতা আফতাব উদ্দিন মোল্লা সোমবার (৩ নভেম্বর) রাতে নিজ ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সেখানে তিনি লিখেন, ‘শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন আখতারুজ্জামান মিয়া ভাই। দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করছি। ব্যক্তিগতভাবে তাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।’
তিনি আরও লিখেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মত ও পথের ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক। ভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের মতাদর্শ নিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হবে—এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। জনগণই শেষ কথা বলবে, জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কে তাদের প্রতিনিধি হবে।’
আফতাব উদ্দিন মোল্লা তার শুভেচ্ছা বার্তায় সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, “আমাদের রাজনৈতিক আচরণ যেন দেশের শাসন ব্যবস্থাকে সহনশীল, উদার ও গণতান্ত্রিক করে তোলে—এটাই প্রত্যাশা। দিনাজপুর-৪ আসনের জনগণকে ধন্যবাদ। আশা করি, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সকলেই সহযোগিতায় এগিয়ে থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।’
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন রাজনৈতিক বিরোধ, সহিংসতা কিংবা প্রতিহিংসার ঘটনা চোখে পড়ে, ঠিক সেই সময়ে এমন বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা সাধারণ মানুষের মাঝে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার প্রতি আশাবাদ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বিরোধী শিবিরেও সৌহার্দ্যের প্রকাশ জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষা ও নির্বাচনী পরিবেশকে শান্তিপূর্ণ করতে ভূমিকা রাখে।
দিনাজপুরের রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক অতীতে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেলেও নির্বাচনী গণতন্ত্রে প্রতিপক্ষকে সম্মান প্রদর্শন নতুন পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে অনেকে আশা করছেন।
এ প্রসঙ্গে একজন স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলেন, ‘সুস্থ প্রতিযোগিতা ও মতের ভিন্নতার মধ্যেও শিষ্ঠাচার বজায় রাখা এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এই বার্তাটি ভোটারদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
এদিকে, আখতারুজ্জামান মিয়া নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও ইতোমধ্যে তাকে ঘিরে নির্বাচনী প্রচার-প্রস্তুতি শুরু করেছেন। অন্যদিকে জামায়াতসহ অন্যান্য দলও এলাকায় নানা কর্মসূচি চালাচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দিনাজপুর-৪ আসন একাধিক দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীতার কেন্দ্রস্থল হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে। ভোটারদের প্রত্যাশা—সহিংসতা নয়, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারবেন।
কেকে/এমএ