আগেই মাইকিং করে জানানো হয় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হাইত (হাউক) উৎসবের কথা। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ রাতেই রওনা দেন বিলের দিকে। ভোরের আলো ফোটার আগেই টানা জাল, পলো ও ঠেলা জালসহ মৎস্য শিকারের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে বিল পাড়ে জড়ো হন মানুষ। কুয়াশাঢাকা ভোরে হৈহুল্লোড় করে তারা হাইত উৎসবে মেতে ওঠেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের দত্তগ্রামের বলদা বিলে হয় মাছ ধরার এ উৎসব।
জানা গেছে, হাইত (হাউক) গ্রামবাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। এরই ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় এই উৎসব হয়ে আসছে। সাধারণত হেমন্তেকালে এই উৎসব হয়ে থাকে। উৎসবে নানা বয়সী মানুষের সঙ্গে শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই জীবনে প্রথমবারের মতো জাল নিয়ে মাছ ধরতে নেমেছেন। থেমে থেমে হৈহুল্লোড়ে মেতে ওঠেন তারা।
মৎস্য শিকারি ও স্থানীয়রা বলছেন, ‘রুই, কাতলা,বোয়াল ও শোলসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে।’
তবে, স্থানীয় একটি পক্ষ বিলের কিছু জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছে এবং সেসব অংশের মাছগুলো চাষের দাবি করে উৎসব আটকে দেয় তারা। যেকারণে এবারের উৎসব আগের মতো তেমন জমজমাট হয়নি। তবুও গ্রামবাংলার পুরোনো ঐতিহ্য ‘হাইত’ উৎসবে অংশ নিতে পেরে খুশী হাজারও মৎস্য শিকারি।
মাইজবাগ পাছপাড়া গ্রাম থেকে হাইত উৎসবে আসা আবুল মিয়া নামে এক মাছ শিকারি বলেন, ‘বলদা বিলের পাড়ের আমার মামার বাড়ি। সেই সুবাদে ছোট বেলা থেকেই এই বিলের সঙ্গে আমার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাই, হাউকের মাইকিং শুনে মাছ ধরতে এসেছি। ৭-৮ কেজির মতো মাছ পেয়েছি। কিন্তু এখন আর আগের মতো মাছ নেই বিলে। বহু দিন পর শখের বশে মাছ ধরতে আসা। খুবই ভালো লেগেছে।’
ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র মাহফুজুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, ‘বিলের বিভিন্ন অংশ লিজে নেওয়ার কারণে মাছ ধরতে এসে মানুষ বাঁধার সম্মুখীন হয়েছে। ফলে, এ বছর বলদা বিলের হাউক উৎস বিগত বছরগুলোর মতো জমজমাট হয়নি। তারপরও এই উৎসব ঘিরে মানুষের আগ্রহ-উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মত।’
কেকে/এমএ