কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সাংবাদিক মো. মিজানুর রহমান পাটোয়ারীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ভৈরব থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
মো. মিজানুর রহমান পাটোয়ারী (৪১) দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার ভৈরব প্রতিনিধি, স্থানীয় দৈনিক গৃহকোণের নিজস্ব প্রতিনিধি ও ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক।
তিনি ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর (পূর্ব) মহল্লার খলিল পাটোয়ারী বাড়ির মো. মজিবুর রহমান আবু মিয়া ও মোছা. রোকেয়া বেগমের ছেলে।
সাংবাদিক মো. মিজানুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, গত ১২ অক্টোবর ভৈরব উপজেলার টুকচানপুর গ্রামের রহিম মিয়া (৩০), রহিম মিয়ার বাবা মোস্তফা মিয়া (৫৯), মা মনোয়ারা বেগম (৫১) ও একই উপজেলার কালিপুর (বাদশাবিল) গ্রামের সালাম মিয়ার স্ত্রী আফরোজা বেগম (৫০), ছেলে সরমিন মিয়া (২৫) ও আসিফ মিয়ার (২১) বিরুদ্ধে ভৈরব পৌরশহরের কমলপুর পূর্ব পাড়া মহল্লার শ্যামল মিয়ার কন্যা ও রহিম মিয়ার স্ত্রী ছাবরিনা বেগম রুমকি (২০) বাদী হয়ে গত রোববার (১২ অক্টোবর) ২০০০ সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ১১(গ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৬।
মামলা রুজু হওয়ার পর র্যাব-১৪ (সিপিসি-৩) ভৈরব ক্যাম্পের একটি বিশেষ দল গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকালে পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি রহিম মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরদিন বুধবার (২২ অক্টোবর) ভৈরব থানায় হস্তান্তর করলে থানা পুলিশ রহিম মিয়াকে কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
সাংবাদিক মো. মিজানুর রহমান পাটোয়ারী উক্ত মামলার ১ নম্বর স্বাক্ষী ও বাদী সাবরিনা বেগম রুমকির আপন মামা হওয়ায় ওই মামলার বিবাদী কালিপুর (বাদশাবিল) গ্রামের সালাম মিয়ার ছেলে সরমিন মিয়া (২৫), আসিফ মিয়া (২১) ও সালাম মিয়ার স্ত্রী মোছা. আররোজা বেগমসহ (৫০) অন্যান্য বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রকাশ্যে তাকেসহ তার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় সাংবাদিক মো. মিজানুর রহমান পাটোয়ারী বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ভৈরব থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সাধারণ ডায়েরি নং- ১০৭৭।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ১১ অক্টোবর ভৈরব উপজেলার টুকচানপুর গ্রামের মোস্তফা মিয়া ও মনোয়ারা বেগমের ছেলে মো. রহিম মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় ছাবরিনা বেগম রুমকির। বিয়ের সময় রুমকির পরিবারের পক্ষ থেকে যৌতুক হিসাবে স্বামী রহিম মিয়াকে নগদ ২ লাখ টাকা, ৩ ভরি স্বর্ণালংকার (মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা) ও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র দেওয়া হয়।
বিয়ের পর থেকে স্বামী রহিম মিয়া, তার বাবা মোস্তফা মিয়া, মা মনোয়ারা বেগম, মামী আফরোজা বেগম, মামাতো ভাই সরমিন মিয়া ও আসিফ মিয়াসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে আরও ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুকের টাকা এনে দিতে পারবে না জানালে রুমকির ওপর চালাতে থাকে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় স্বামী রহিম মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বাবার বাড়ি থেকে আরও ৫ লাখ টাকা এনে দিতে চাপ দেয়। তিনি টাকা এনে দিতে অস্বীকার করলে প্রথমে রহিম মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ শুরু করেন, পরে রহিম মিয়াসহ তার বাবা মোস্তফা মিয়া, মা মনোয়ারা বেগম, মামী আফরোজা বেগম, মামাতো ভাই সরমিন মিয়া (২৫) ও আসিফ মিয়া (২১) মিলে রুমকির গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা করে।
এতেও তারা খ্যান্ত হয়নি, এরপর তারা লাঠি ও রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধরসহ তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে তাকে গুরুতর আহত করে। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম হয় এবং তলপেটে আঘাত পেয়ে মারাত্মক রক্তপাত হয়। আহত রুমকিকে চিকিৎসা না করিয়ে তারা সবাই মিলে রুমকি শরীর থেকে স্বর্ণালংকার খুলে রেখে তাকে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
ভুক্তভোগী রুমকি বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই নানা অজুহাতে আমাকে নির্যাতন করা হতো। যৌতুকের জন্য তারা আমাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেছে। অবশেষে আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’
কেকে/বি