ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ফেরিঘাটে মেঘনা নদী পারাপারে ট্রলার মালিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনপ্রতি ১০ টাকার ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা, আর সন্ধ্যার পর ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
প্রতিদিন এ পথে প্রায় ১০-১৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এটি একটি আঞ্চলিক সড়ক হওয়ায় বাঞ্ছারামপুর ও আড়াইহাজারের ৭-৮টি উপজেলার মানুষ নিয়মিত এ পথে চলাচল করেন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বাহেরচর, মানিকপুর, ছয়ানী, আইয়ুবপুর, ধারিয়ারচর, কানাইনগরসহ অন্তত ২০ গ্রামের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ট্রলারে করে নদী পার হয়ে আড়াইহাজারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেছে, তাদের কাছ থেকে ট্রলার মালিকরা ২০ টাকা করে আদায় করছেন।
বাঞ্ছারামপুর মানবতা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক মাহমুদউল্লাহ ও বাঞ্ছারামপুর ব্লাড ব্যাংকের পরিচালক আশিকুর রহমান বাবু জানান, বিগত ৫ আগষ্টের পর আমরা ট্রলার মালিকদের সাথে মৌখিক সমঝোতায় বসেছিলাম। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, দিনে এবং রাতে সর্বক্ষণ যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে পারাপার বাবদ ভাড়া নিবে। কিন্তু এখন তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। এখন বিষয়টি প্রশাসনকে দেখতে হবে।
জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে ২০১০ সালের ২৭ আগস্ট ঢাকা-সিলেট নৌপথের মেঘনা নদীতে কড়িকান্দি-বিষনন্দী ফেরি চালু করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। কড়িকান্দি পন্টুন থেকে বিষনন্দী পন্টুন পর্যন্ত মেঘনার দূরত্ব দেড় কিলোমিটার। কড়িকান্দি-বিষনন্দী ফেরিঘাট ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, নবীনগর, কুমিল্লার হোমনা, মুরাদনগর উপজেলার মানুষ নিয়মিত চলাচল করছে। এ ছাড়া আড়াআড়িভাবে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় (ট্রলার) নদী পার হতে ৮-১০ মিনিট লাগে। নদী পার করতে জনপ্রতি ভাড়া ১০ টাকা হলেও বেশির ভাগ সময়ই ২০ টাকা হারে আদায় করছেন ট্রলার মালিকেরা। আর যাত্রী পারাপারের কাজ করছে বাঞ্ছারামপুর ও আড়াইহাজারের শতাধিক ইঞ্জিনচালিত নৌকা।
ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর ও আড়াইহাজার এলাকায় শতাধিক ইঞ্জিনচালিত নৌকা নদী পারাপারে নিয়োজিত। এসব ট্রলারে ৩০-৪০ জন যাত্রী একসঙ্গে পারাপার হচ্ছেন এবং দিনের বেলায়ও জনপ্রতি ২০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। রাতে নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
স্থানীয় যাত্রী মো. কবির হোসেন বলেন, আমি সপ্তাহের তিন-চার দিনই ট্রলার দিয়া নদী পার হচ্ছি। কিন্তু প্রতিবারই নদী পার করতে ২০ টাকা করে নিচ্ছেন ট্রলারমালিকেরা। মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বের জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া আদায়; এটা একেবারে জুলুম। অথচ একই জায়গা থেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা গোপালদী পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হয় ২০ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তামান্না ইসলাম বলেন, আমরা যাত্রীরা ট্রলারচালকদের কাছে জিম্মি। ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা আদায়ের প্রতিবাদ করলে ট্রলারমালিকেরা এক জোট হয়ে যাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। যাত্রীরা অসহায় হলেও দেখার কেউ নাই।
এ বিষয়ে কড়িকান্দির ট্রলারচালক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ঘাটে প্রায় সময়ই নৌকা বেশি থাকে। প্রতিদিন খেপ দেয়া যায় না। নৌকা বেশি হওনের কারণে ভাড়া ২০ টাকা করে নিচ্ছি। কড়িকান্দি থেকে ৬০-৭০টি নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করা হচ্ছে।
বিষনন্দী এলাকার কাজল মাঝি বলেন, আমরা সব সময় ভাড়া ২০ টেকা কইরা লই না। মাঝেমইদ্দে ভাড়া ২০ টেকা কইরা লই। নৌকা বেশি হওনের কারণে ভাড়া কিছু বেশি লইতে হয়।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস আরা বলেন, বিষয়টি আমার আগে জানা ছিলো না। এ বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভাড়া বেশী নিলে ট্রলার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেকে/ আরআই