এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (এ্যাব) আহ্বায়ক প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম তুহিন বলেছেন, ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বকে কাজে লাগাতে পারলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) আইইবি মিলনায়তনে এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ এ্যাব’র উদ্যোগে ‘গণতান্ত্রিক উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রকৌশলীদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের আহ্বায়ক প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম তুহিন বলেন, ‘আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের একটু উদাহরণ দিতে চাই। ১৯৭০ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। ওই সময় তাদের দেশের মাথাপিছু আয় ছিল প্রায় ১৬০ মার্কিন ডলার। আমাদের দেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালে। তখন তাদের কোনো তেল নাই, গ্যাস নাই- যদিও আমাদের কিছু আছে। ১৯৭০ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এই ১৫ বছরে এসে তাদের অর্থনৈতিক মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন ডলার। তাদের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) দাঁড়ায় প্রায় ১০০ বিলিয়ন (দশ হাজার কোটি) ডলার। ১৯৯৫ সালে, অর্থাৎ আরো দশ বছরের মধ্যে, তাদের মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজার ডলার এবং মোট জিডিপি হয় সাড়ে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া ১৫ বছরে তাদের দেশকে একটি উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গেছে। আমাদের অনেক ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে। দেশ হিসেবে আমরা একটি ভালো সূচনাবিন্দুতে আছি। যদি আমরা আমাদের গতিশীল নেতৃত্ব ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে বাংলাদেশকে আগামী ১০ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।’
শাহরিন ইসলাম তুহিন বলেন, ‘আমাদের কিছু নতুন আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করতে হবে না। এখন অনেক সহজ নীতি রয়েছে—এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগ, সফটওয়্যারের যুগ। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭ কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। আমাদের অনেক যুবক আছে যারা ফ্রিল্যান্সিং করছে—‘ফাইভার’ ও ‘আপওয়ার্ক’ নামের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। ঘরে বসে তারা মার্কিন ডলার আয় করছে। এটা কিন্তু একটি ভালো দিক। এআই এবং সফটওয়্যারের কাজে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আগামীতে যে সরকার আসবে, তাদের সহযোগিতা লাগবে। আমরা মনে করি, বিএনপি আসবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সবার সহযোগিতা পাই, ইঞ্জিনিয়ারদের সহযোগিতা পাই, টেকনিক্যাল মনের মানুষদের সহযোগিতা পাই—তাহলে আগামী ২০ বছরে বাংলাদেশে ২০ ট্রিলিয়ন (২০ লাখ কোটি) মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কর্মসংস্থানের দিক থেকে যদি ১৫ লাখ মানুষ নিয়মিতভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে, তাহলে এই লক্ষ্য অর্জন করা যাবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন সাহেব, আগামীতে যিনি মন্ত্রী হবেন, তিনি যেন আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের সহযোগিতা করেন। আমরা চাই এ্যাব (এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ) সামাজিক ব্যবসার (সোশ্যাল বিজনেস) সঙ্গে জড়িত হোক। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের অনেক মতামত আছে। রাজশাহী থেকে এক ইঞ্জিনিয়ার মতামত দিয়েছেন, এরকম আরো অনেকে দিয়েছেন। আমরা শুধু ইঞ্জিনিয়ারদের নয়—সাধারণ মানুষের, বিএনপির এবং দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে চাই।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব, আইইবির সাবেক প্রেসিডেন্ট, এ্যাব’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রকৌশলী এএনএইচ আখতার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বুয়েট আহসান উল্লাহ হলের সাবেক ভিপি, এ্যাব ঢাকা বিভাগের সাবেক সেক্রেটারি আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ও আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন তালুকদার।
আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন প্রকৌশলী খালিদ হাসান চৌধুরী পাহিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং এ্যাব’র উপদেষ্টামণ্ডলীর সম্মানিত সদস্য, প্রকৌশলী সফিউল আলম তালুকদার সবুজ, এ্যাব’র উপদেষ্টামণ্ডলীর সম্মানিত সদস্য, প্রকৌশলী আলমগীর হাছিন আহমেদ, এ্যাব’র সাবেক মহাসচিব ও সদস্য, আহ্বায়ক কমিটি, এ্যাব, প্রকৌশলী মিয়া মুহাম্মদ কাইউম, আইইবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য, আহ্বায়ক কমিটি, এ্যাব, প্রকৌশলী আতিকুর রহমান, এ্যাব’র উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, প্রকৌশলী খান মনজুর মোরশেদ, আইইবি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ভাইস-প্রেসিডেন্ট (একাডেমিক ও আন্তর্জাতিক) এবং সদস্য, আহ্বায়ক কমিটি, এ্যাব, প্রকৌশলী শোয়েব বাশরী হাবলু, সদস্য, আহ্বায়ক কমিটি, এ্যাব।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম তুহিন, সাবেক সংসদ সদস্য, এ্যাব’র সাবেক মহাসচিব এবং আহ্বায়ক, এ্যাব এবং সঞ্চালনায় ছিলেন প্রকৌশলী কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নু, সদস্য, আহ্বায়ক কমিটি, এ্যাব এবং প্রকৌশলী শফিউল আজম ফাহিম, সদস্য, আহ্বায়ক কমিটি, এ্যাব। সভায় উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া উপ-কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ আহসানুল রাসেল, সদস্য, আহ্বায়ক কমিটি এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক (প্রশাসন ও অর্থ আইইবি) এবং মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্যসচিব প্রকৌশলী কেএম ফারজাদুল ইসলাম মিরন।
কেকে/এজে