সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
সাহিত্য
মুক্ত গদ্য
‘দিল্লি তো বানি দুলহান, দুলা নিজামউদ্দিন—সারে হিন্দ কা বাদশাহ খাজা মঈনুদ্দিন’
হাসনাত শোয়েব
প্রকাশ: শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ৫:৪৩ পিএম
ছবি : হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা।

ছবি : হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা।

দিল্লির বুকে এক টুকরো শান্তির নাম হজরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রহ.)-এর দরগাহ। নাহ, আমি কখনো যাইনি, বইপত্র পড়ে এবং নানা কিছু ঘেঁটে জেনেছি। উপমহাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহরে গত ৭০০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজত্ব করছেন নিজামউদ্দিন আউলিয়া। আজ থেকে শুরু হচ্ছে উনার ৭২২তম ওরস শরিফ। চিশতিয়া সিলসিলার অন্যতম এই প্রাণ পুরুষ আধ্যাত্মিকতা, প্রেম ও রুহানিয়াতের এপিটোম। ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে আধ্যাত্মিকতার জাল ছড়িয়ে রাখা নিজামউদ্দিন আউলিয়ার জন্ম ভারতে হলেও তার পূর্ব পুরুষ এসেছেন বুখারা থেকে। মঙ্গোলদের অত্যাচারের হাত বাঁচতেই তাদের পালিয়ে আসা। ১২৩৮ খ্রিষ্টাব্দে নিজামউদ্দিনের জন্ম ভারতের বাদায়ু শহরে। ১২ বছরের বয়সে তিনি জানতে পারেন আরেক আউলিয়া ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকরের কথা। যিনি ছিলেন কুতুবুল আকতাব হজরত কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রহ.) এর শিষ্য। চিশতিয়া সিলসিলার মূল অর্ডারটা এমন—মইনুদ্দিন চিশতী → বখতিয়ার কাকী → বাবা ফারিদ (ফারিদউদ্দিন গঞ্জেশক্কর)→ নিজামুদ্দিন আউলিয়া। 

বাবা ফরিদের কাছ থেকেই মারেফাত এবং আধ্যাত্মিকতার জ্ঞান লাভ করেন নিজামউদ্দিন। নানা ঘটনার পর ২০ বছর বয়সে তিনি বাবা ফরিদের সান্নিধ্য লাভ করেন। নিজামউদ্দিনকে দেখে বাবা ফরিদ যে কথাগুলো বলেন, সেই কথাগুলো বাংলায় এমন, ‘তোমার বিচ্ছেদের আগুন অনেক হৃদয় পুড়িয়ে দিয়েছে, তোমাকে দেখার আকাক্সক্ষার ঝড় অনেক জীবন বিধ্বস্ত করেছে।’

১২৬৫ সালে বাবা ফরিদ নিজামউদ্দিনকে শিষ্য শিক্ষা দেওয়ার জন্য ‘ইজাজাত নামা’ প্রদান করেন। আর তার দেওয়া খিলাফতনামায় লেখা ছিল, ‘তুমি এমন একটি গাছ হবে যার শান্ত ছায়ার তলে মানুষ শান্তি খুঁজে পাবে। ‘বাবা ফরিদ বলেছিলেন, নিজামউদ্দিন হচ্ছে তার আত্মা। বলা হয়, নিজামউদ্দিনের ওপর ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকরের যে প্রভাব, এমন প্রভাব খুব কম গুরুই তাদের শিষ্যের ওপর রাখতে ফেলেছিলেন। যে প্রভাব নিয়েই দিল্লির আধ্যাত্মিক জগতের শাহেনশাহ হয়ে ওঠেন নিজামউদ্দিন। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি বাবা ফরিদের দ্বারা খলিফা নির্বাচিত হন। সেইসঙ্গে দিল্লিতে কাজ করার জন্য আদিষ্ট হন। এরপরই ধীরে ধীরে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন ‘সুলতান-উল-মাশায়েখ’ এবং ‘মাহবুব-এ-ইলাহী’। সেইসঙ্গে চিশতিয়া সিলসিলার এক মহত্তম আধ্যাত্মিক নেতাও।

নিজামউদ্দিন আউলিয়ার কথা বললে যে মানুষটির কথা অবলীলায় চলে আসে তিনি হলেন হজরত আমির খুসরো। গজল সংগীতের আদিপুরুষ হিসেবে খ্যাতিমান হলেও আমির খুসরোর আরেকটি পরিচয় তিনি ছিলেন নিজামউদ্দিন আউলিয়ার অন্যতম শিষ্যদের একজন। 

পীরের প্রতি ভালোবাসা ও প্রেমকে নিজের সংগীতে ঢেলে দেন তিনি। অবিশ্বাস্য সংগীত প্রতিভার এরচেয়ে সুন্দর প্রকাশ আর কি হাতে পারত! অথচ খোসরু ছিলেন পুরোদস্তুর দরবারি কবি। পীরের প্রতি প্রেমই তাকে অন্য রকম মানুষে পরিণত করে। নিজামউদ্দিনও খুসরোকে সেভাবেই গ্রহণ করেছিলেন, একবার খুসরোকে উদ্দেশ্যকে বলেছিলেন, ‘আমি সবার প্রতি ক্লান্ত হতে পারি, কিন্তু তোমার প্রতি কখনো না।’ 

আরেকবার নিজামউদ্দিন গভীর দুঃখে ভেঙে পড়েন, তার ভাতিজার মৃত্যুর পর। তখন খুসরো দেখলেন একদল নারী হলুদ পোশাকে গান গাইতে গাইতে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা কেন জানতে চাইলে তারা বলল, এটি বসন্ত উৎসব (Basant Panchami)।

খুসরোও এরপর আধ্যাত্মিকতার তালে নাচতে নাচতে তার নিজামউদ্দিনের দরগায় যান। তাকে দেখে নিজামউদ্দিনের মুখে প্রথম হাসি ফুটল।

সেই দিন থেকে এখনো নিজামউদ্দিন দরগায় বসন্ত উৎসব পালিত হয়।

এই উৎসব উপলক্ষে খুসরো লিখেছিলেন, 
‘আজ রং হ্যায় হে মা রং হ্যায় রি,
মোরে মেহবুব কে ঘর রং হ্যায় রি।
সজন মিলাভরা, সজন মিলাভরা,
সজন মিলাভরা মোরে আঙ্গন কো,
আজ রং হ্যায় হে মা রং হ্যায় রি।
মোহে পীর পায়ো নিজামুদ্দিন আউলিয়া,
নিজামুদ্দিন আউলিয়া মোহে পীর পায়ো।
দেশ বড়ে মেঁ ঢুন্ধ ফিরি হুঁ,
তোরা রং মন ভায়ো রি...’

এই গানটি পরে আরও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়ে নুসরাত ফতেহ আলী খানের কণ্ঠে। 

নিজামউদ্দিনের প্রতি খুসরো এতই নিবেদিত ছিলেন মুর্শিদের মৃত্যুর ছয় মাস পরেই তিনিও স্রষ্টার ডাকে সাড়া দেন। নিজামউদ্দিন আউলিয়ার ভবিষ্যদ্বাণী মতোই দুজন এখন পাশাপাশি কবরে শুয়ে আছেন। 

নিজামউদ্দিন আউলিয়া শুধু আধ্যাত্মিকভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবে প্রবল এক চরিত্র ছিলেন। রাজনীতি নিয়ে চিশতিয়া সিলসিলার যে দর্শন তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন। ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকর যেমনটা বলেছিলেন, ‘যদি আপনি প্রবীণ বা আধ্যাত্মিক গুরুদের মতো আধ্যাত্মিক অবস্থানে পৌঁছাতে চান, তবে শাসক বা রাজবংশের লোকদের সান্নিধ্য থেকে বিরত থাকুন।’

চিশতিয়া সিলসিলার শুরুর দিকের সাধকেরা রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ সুবিধাও ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানা যায়। এ প্রসঙ্গে নিজামউদ্দিন ও আলাউদ্দিন খিলজির বিখ্যাত ঘটনাটা উল্লেখ করা যায়। নিজামউদ্দিন আউলিয়া নিজের সময়ে নাকি ৭ জন বাদশাহকে দিল্লির ক্ষমতায় বসতে দেখেছেন কিন্তু কারো সঙ্গে তিনি দেখা করেননি। তো একবার তখনকার সম্রাট জালালউদ্দিন খিলজির ইচ্ছে হলো নিজামউদ্দিন আউলিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন। নিজামুদ্দিন আউলিয়ার কাছে উনার শিষ্য ও সুফি কবি আমির খুসরোকে দিয়ে দাওয়াত পাঠালেন। এ দাওয়াত এক বাক্যে প্রত্যাখ্যান করেন আউলিয়া। এরপর খিলজি খসরুকে বললেন পীর সাহেব না আসলে আমি নিজে পিরের দরবারে যাব। এটা শুনে নিজামুদ্দিন আউলিয়া বললেন, সম্রাটকে গিয়ে বলো আমার দরবারে দুটি দরজা আছে। সম্রাট যদি সামনের দরজা দিয়ে আসে আমি পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাব। এ কথা শুনে খিলজি নাকি হতাশ হয়ে পড়েন এবং একপর্যায়ে প্যারালাইজড হয়ে যান। এরপর আলাউদ্দিন খিলজি মসনদে বসার পর চিঠি লিখে পরামর্শ চেয়েছিলেন নিজামউদ্দিনের কাছে কিন্তু সেই চিঠি নিজামউদ্দিন খুলেও দেখেননি। ক্ষমতা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার যে উপদেশ গুরু ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকর দিয়েছিলেন তা তিনি কখনোই ভুলেননি। এমনকি বলা হয়, দরবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই তিনি অতি প্রিয় দুই শিষ্য আমির খুসরো ও আমির হাসান সিজ্জিকে খেলাফত দেননি। 

অরুন্ধতী রায় তার স্মৃতিকথা ‘মাদার মেরি কামস টু মি’র ‘ইন দ্য শেড অফ হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া’ অধ্যায়ে লিখেছেন, শহরের কোলাহল, রাজনৈতিক হিংসা, এবং নোংরামির বিপরীতে নিজামউদ্দিন আউলিয়া দরগার স্বরূপে দাঁড়িয়ে থাকার কথা। দরগার পরিবেশে ব্যক্তিগতভাবে শান্তিতে থাকার কথাও বলেছেন তিনি। এই হচ্ছেন সুলতানুল মাশায়েখ, এই হচ্ছেন দিল্লির আধ্যাত্মিক সুলতান।

কেকে/এজে

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close