ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণের সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ব্যাংকটির গ্রাহক ও কর্মকর্তারা।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে ব্যাংকটির বনানী শাখার সামনে ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরাম ও বৈষম্যবিরোধী চাকুরী প্রত্যাশী পরিষদের আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে ব্যাংকটির পর্ষদ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বহু কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছিল। তারা অবিলম্বে এসব কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।
মো. আব্দুল মান্নান মিলন বলেন, বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট শাসনের আমলে কিছু অবৈধ কুচক্রী মহল এই ব্যাংকে বিভিন্ন মামু খালুর মাধ্যমে জয়েন করেছিল। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক মামু খালুর জয়েনে বিশ্বাস করে না, তারা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়। এখানে কোন দলীয় বা নির্দলীয় কিছু করে না। মেধাবী লোকের জায়গা, সততার জায়গা, সততার ব্যাংকিং এর নাম হলো ইসলামী ব্যাংক। সুতরাং সেই মেধার কোটাকে বয়কট করে যারা মামা খালুর কোটায় জয়েন করেছিল তারা এখন বিভিন্নভাবে পায়তারা করেছে এই ব্যাংকে কিভাবে ধ্বংস করা যায়। তারা বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে এবং তাদেরকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে হবে। আমরা জেগে আছি, জেগে থাকব ইসলামী ব্যাংকের অতন্ত্র প্রহরীরা। আল্লাহর জমিনে সতর্ক করে দিতে চাই, আপনাদের কোন কালো থাবা বাংলার জমিনে পড়তে দেওয়া হবে না। সুতরাং আপনারা সচেতন হন। যেকোন চক্রান্তের জন্য প্রতিরোধ করার জন্য বাংলার মাটি ও মানুষের বাঘ এদেশের ১৮ কোটি মানুষ ইসলামী ব্যাংকের সাথে আছে। আমরা কখনো শকুনের লাল চোখকে পরোয়া করিনা, ভয় পাইনা।
তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখছেন বাংলাদেশের প্রত্যেকটা আনাচে কানাচে এখন যারা ধান্দাবাজ তাদের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। সুতরাং বাংলাদেশের মানুষ কোন চাঁদাবাজদের স্থান দিবেনা। বাংলাদেশ সুসংগঠিতভাবে পরিচালিত হবে। আপনারা জানেন ৫ থেকে ৭ টি ব্রাঞ্চ বিভিন্ন জায়গায় একেবারে ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। এদেরকে আত্নস্যাৎ করে বেকার ভাই-বোনদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। আমরা এটির জন্যেও প্রতিবাদ জানাই। যারা মেধার অবমাননা করে নিয়োগ পেয়েছেন তাদেরকে পুনরায় মেধার ভিত্তিতে এবং পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে আসতে হবে। নয়তো তাদেরকে বয়কট করা হবে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিগত ১৭ বছর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার এদেশের রাষ্টীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ছেড়েছে। এদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়ে তারা ব্যাংকিং খাতকে লুট করে অর্থনৈতিকে ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে সারা বিশ্বের ভিতরে এবং এক হাজার ব্যাংকের ভিতরে বাংলাদেশের মাত্র একটি ব্যাংক জায়গা করে নিয়েছিল সেই ব্যাংক হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক। সেই ইসলামী ব্যাংকে শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকার তার দলীয় ক্যাডার এস আলম গ্রুপকে দায়িত্ব দিয়ে এই ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এস আলমের বাড়ি চট্রগ্রামের পটিয়া থেকে কয়েক হাজার লোককে জেলা পরীক্ষায় শুধুমাত্র সিভি ড্রপের মাধ্যমে লোক নিয়োগ দিয়েছে। আমরা দেখেছি এই ব্যাংকের অদক্ষ লোকগুলো যখন সেবা দিত আমাদের ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিতে ২০/৩০ মিনিট লেগে যেত। কারণ তারা কাজ জানে না। তারা শুধু বসে বসে টাকা নিয়েছে। আমরা যারা বিগত ১৭ বছর খুনি হাসিনার রোশানলে পরে চাকরি পরীক্ষা দিয়ে কোন চাকরি পাই নাই, মেধার মূল্যায়ন হয় নাই, পরীক্ষা দিয়েও চাকরি পাই নাই অথচ পটিয়ার ওরা ইসলামী ব্যাংকে সিভি ড্রপ করে তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এই দেশের সরকার পরিবর্তনের পরে তাদেরকে বলা হয়েছে তোমরা পরীক্ষা দাও, তারা পরীক্ষা না দিয়ে নতুন নাটক শুরু করেছে। কারণ আমরা জানি তারা মেধার ভিত্তিতে আসে নাই, তারা এসেছিল শুধুমাত্র সিভি ড্রপের মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এদেশের সরকার সহ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানাই আপনারা পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদেরকে সুযোগ দিন। তা না হলে আপনারা যদি সেই পুরাতন ফ্যাসিস্টদের সেই নিয়োগকৃত লোকদেরকে আবার সুযোগ দেন তাহলে যারা চাকরি প্রত্যাশী আছি আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য হবো। আমরা চাই শুধু ব্যাংকিং সেক্টর নয় বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সেক্টরে মেধার মূল্যায়ন হোক। পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার মাধ্যমে এই দেশ আগামীদিন সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা কাউকে বৈষম্য করে কোথাও থেকে ছাঁটাই করতে চাই না। আমরা চাই মেধার মূল্যায়ন হোক। আমরা যারা ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক আছি আমরা চাই এই ব্যাংক বাংলাদেশে যে সুনাম বজায় রেখেছে তা অক্ষুণ্ন থাকুক।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, মো. মাহমুদুল হাসান, মো. মাসুদুর রহমানসহ ব্যাংকটির সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর ব্যাংকটি থেকে বিভিন্ন সময় নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ ঋণ বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে, যার ফলে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। একই সময়ে ইসলামী ব্যাংকে চট্টগ্রামভিত্তিক বহু ব্যক্তিকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংক খাতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করে। এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিলে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়।
কেকে/ আরআই