নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আনিকা আক্তার নামে এক বাউল শিল্পীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় স্বামী হাবিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (৪ অক্টোবর) ভোরে সাইনবোর্ড এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
নিহত আনিকা আক্তার মাদারীপুর জেলার মোস্তফাকুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে।
জানা যায়, ভোরে ফতুল্লার ভুইগর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে অজ্ঞান অবস্থায় অনিকাকে স্বামী হাবিবুর রহমান সাইনবোর্ড প্রো-একটিভ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক অনিকাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং স্বামী হাবিবুরকে আটক করে।
নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, ৫ বছর আগে অনিকাকে হাবিবুর ভালোবেসে বিয়ে করে। তাদের বিয়ের পর থেকেই দাম্পত্য কলহ ছিলো। ঝগড়া হলেই হাবিব আবার বিয়ে করতো। এভাবে হাবিব পর্যায়ক্রমে অনিকার আগে ৪টি বিয়ে করেছে। ৪ মাস আগে অনিকার একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। সেই সন্তান কোলে নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত একাধিক বাউল ক্লাবে গিয়ে গান করতেন। সারারাত গান গেয়ে যে টাকা আয় হতো তা জোড় করে নিয়ে যেত হাবিবুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি মালা নামের এক বাউল নারী শিল্পীকে হাবিবুর বিয়ে করেন। হাবিবুরের কাছে সেই বিয়ের সত্যতা জানার চেষ্টা করেন অনিকা। এনিয়ে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর চলে যায়। সেখান থেকে কয়েকদিন আগে অনিকাকে তালাকের প্রথম নোটিশ পাঠায়। অনিকা সেই নোটিশ নিয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে নালিশ করেন। এতে হাবিবুর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে স্বর্না নামে আরেকজন নারী বাউল শিল্পিকে দিয়ে অনিকাকে হত্যার চেষ্টা করেন।
পরিবারের দাবি, পরিকল্পিত ভাবে অনিকাকে হত্যা করে তা আড়াল করতেই হাবিবুর মরদেহ নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে।
এ বিষয়ে হাবিবুর রহমান জানান, অনিকাকে আমি হত্যা করেনি। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর থেকে এসে অনিকার খোঁজে ভাড়া নেয়া ভুইগড়ের ফ্ল্যাট বাসায় যাই আমি। সেখানে গিয়ে দরজায় অনেক সময় ধাক্কাধাক্কি করি। পরে দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে দেখি অনিকার নিথর দেহ জানালার গ্রীলের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছে। এরপর তাকে নিয়ে সাইনবোর্ড প্রো-একটিভ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অনিকাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, ময়না তদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে নিহতের পরিবার দাবী করছে, আনিকাকে হত্যা করেছে তার স্বামী হাবিবুর। তবে এখনো পর্যন্ত তারা লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি।
তিনি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাবিবুরকে আটক করা হয়েছে।
কেকে/ আরআই