খাগড়াছড়ির কিশোরী ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে যে ভয়াবহ সহিংসতা দেখা দিয়েছে, তা আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও রাষ্ট্রীয় দুর্বলতার নগ্ন চিত্রকেই তুলে ধরেছে।
এক কিশোরীর ওপর সংঘটিত ঘৃণ্য অপরাধের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ যখন ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছে, তখন সেটি ক্রমে সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। আগুন, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও গুলিতে প্রাণহানি- এসবের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের মূল বিষয়টি আড়াল হয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায়বিচার পাবে কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। প্রথমত, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনার পর তদন্ত দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে এগোনো উচিত ছিল। কিন্তু তার বদলে বারবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, ১৪৪ ধারা জারি, গুলির ঘটনা প্রমাণ করে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থতা ছিল। বিশেষত তিনজনের প্রাণহানি এবং বাজারে আগুন লাগার ঘটনা প্রশাসনিক ব্যর্থতারই প্রতিফলন। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনের অভিযোগ তোলা হলেও, সেটি এখনো প্রমাণিত হয়নি। এ ধরনের বক্তব্য দায়িত্ব এড়ানোর শামিল বলেই মনে হয়।
সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো পাহাড়ি-বাঙালি বিভাজনের মধ্যে এই আন্দোলন নতুন করে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে। পাহাড়ের দোকানপাট ও বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, লুটপাট- এসব ঘটনা পারস্পরিক অবিশ্বাস আরো বাড়াবে। অথচ এই সংবেদনশীল অঞ্চলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একটা সহনশীল প্রতিবেশ তৈরি করা।
আমাদের মনে রাখতে হবে, আন্দোলনের মূল দাবি ছিল ধর্ষণের বিচারের নিশ্চয়তা। তাই বিচারের স্বচ্ছ ও দ্রুত প্রক্রিয়া শুরু না করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে। একই সঙ্গে সহিংসতার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার পরিবারকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও মানসিক সহায়তা দেওয়া জরুরি।
খাগড়াছড়িতে ন্যায়বিচারের দাবিকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা চলছে, সেটি শুধু স্থানীয় সমস্যা নয়, গোটা দেশের জন্যই সতর্কবার্তা। রাষ্ট্র যদি অপরাধীকে শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচারের বিশ্বাস আরো ক্ষয়িষ্ণু হবে। আর তা হলে সহিংসতার চক্র থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়বে। শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো ন্যায়বিচার।
কেকে/ এমএস