হাতিয়ায় ভূমিহীনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ‘ভুয়া ধর্ষণ’ মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাসে বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
স্ট্যাটাসে হান্নান মাসউদ লেখেন, গতকাল দ্বীপ হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নে এক সমাবেশে আমি ভুলবশত ও তাৎক্ষণিকভাবে ‘ভুয়া ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার করে ফেলি যা কোনোভাবেই আমার ইন্টেনশন ছিল না। ধর্ষণের মতো গর্হিত অপরাধকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। ধর্ষকের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দটি ব্যবহার করায় আমি বিব্রত ও দুঃখিত। আশা করি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, সমর্থক ও সমালোচকরা এটাকে আমার মুহূর্তের ভুল হিসেবেই বিবেচনা করবেন।
তিনি লেখেন, পাহাড় ও সমতলের বাংলাদেশের সব নাগরিকের প্রতি আহ্বান থাকবে পরাজিত ও ফ্যাসিবাদী শক্তির সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ঐকবদ্ধ থাকুন। আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন। উভয় পক্ষের কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
হান্নান মাসউদ নিজেই ঢাকা পোস্টকে স্টাটাসের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গতকালকের বক্তব্যে আমি অনিচ্ছায় একটি অনুপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করেছি—এর জন্য দুঃখিত ও লজ্জিত। ধর্ষণ একটি নিকৃষ্ট অপরাধ, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আশা করি সবাই এটিকে আমার এক মুহূর্তের ভুল হিসেবেই বিবেচনা করবেন। জাতির সবাইকে শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছি।
জানা গেছে, রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের সাইফুল মার্কেট এলাকায় ভূমিহীনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় হান্নান মাসউদ বলেন, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। ভারত আমাদের পার্বত্য অঞ্চল কেড়ে নিতে চায়। তারা শেষ ট্রাম কার্ড খেলছে। পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে তারা অস্থিতিশীল করে তুলছে। তারা একটি ভুয়া ধর্ষণ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের বাঙালি এবং পাহাড়িদেরকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তার এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও কি ছাড়বে? ভারতকেও জবাব দেওয়া হবে। বাংলাদেশ সরকারকে এ জবাব দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে। যারা বাংলাদেশের মাটি কেড়ে নিতে চাইবে তাদেরকে আমরা মোকাবিলা করবো, ইনশাআল্লাহ। আমরা একাত্তরে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করেছি, পঁচিশে কি ভারতীয়দের মোকাবিলা করতে পারবো না? পারবো। ভারতকে গোবর খাওয়াইয়া দেব, ইনশাআল্লাহ। তাদের সুস্বাদু খাবার গোবর তাদের খাওয়ানো হবে। ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি সোনার চাইতে খাঁটি, কাউকে কেড়ে নিতে দেব না।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফেরার পথে এক কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে উত্তেজনা শুরু হয়। প্রতিবাদে বিক্ষোভ দ্রুত সহিসংতা, আদিবাসীদের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত তিনজন নিহত হন।
কেকে/এজে