সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
মৃত্যুর পর ‘নিরাপদে কবরে শেষ ঘুমের’ গ্যারান্টি চাই!
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:০৪ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাইত মানুষ আর ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর এ দেশের মানুষকে কি মৃত্যুর পর তার লাশ ও কবরের নিরাপত্তার গ্যারান্টি চাইতে হবে। ১৯৭২ সালের পর থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে যখন ক্রমবর্ধমানভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যু ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছিল। ঠিক তখই প্রখ্যাত বাম রাজনীতিক ও সাংবাদিক নির্মল সেন প্রশ্ন তুলেছিলেন, এমন একটি দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্যও প্রার্থনা করতে হবে কিনা? সে সময়টা তিনি কলাম লিখেছিলেন ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’। 

এ স্লোগানটি শুধু নির্মল সেনের ব্যক্তিগত উদ্বেগ ছিল না, বরং এটি সাধারণ মানুষের উদ্বেগ ও হতাশারও প্রতিচ্ছবি ছিল। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর সদ্য গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হওয়ার পর সারা দেশে ভিন্ন মতাবলম্বীদের আস্তানা, আখড়ায়, দরবারে হামলা, আগুন লাগানো, কবর থেকে লাশ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলার যে ঘটনা ঘটছে তাতে আবারো নির্মল সেনের মতো কেউ কি বলবে ‘লাশ ও কবরের নিরপত্তার গ্যারান্টি চাই!’  

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে একটি মহল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর লক্ষে অব্যাহত ষড়যন্ত্র করছে। বিশেষ করে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়, ঘরবাড়ি, সহায়সম্পত্তির ওপর হামলা করে, কবর থেকে লাশ উঠিয়ে অগ্নি সংযোগের মাধ্যমে দেশে একটি নৈরাজ্যের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। ফ্যাসিবাদের পতনের পর স্বৈরশাসকদের ইতিহাস মুছতে গিয়ে ছাত্র আন্দোলনের সফলতোকে পুঁজি করে এক শ্রেণির ষড়যন্ত্রকারীরা ভাস্কর্য ভাঙতে গিয়ে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদ, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৭ বীর শ্রেষ্ঠকে মুছে দিতে চাচ্ছে। হেফাজতের নামে কেউ কেউ অতিউৎসাহি হয়ে রাজধানীর ঐতিহাসিক শাপলা চত্বরকে শহীদি চত্ত্বর বানানোর চেষ্টা, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার ভাঙছে, জলের গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করেছে।
সর্বশেষ ভিন্ন মত ঘোষণাকারী ‘নুরাল পাগলা’ ও তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজবাড়ীতে যে ঘটনা ঘটল, তা সত্যই নিন্দনীয়, এটা কোনো শুভ লক্ষণ নয়। এটা সত্য যে, নুরাল পাগলার কর্মকাণ্ড হয়তো অনেকের কাছেই সমর্থনযোগ্য নয়; সমর্থন যোগ্য হওয়ার কথাও নয়। অন্তত সামাজিক মাধ্যমে তার যেসব কথা প্রচার করা হয়েছে, সেগুলো ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণযোগ্য নয়। 

নুরাল পাগলার কবরে যে আঘাত হানা হবেÑ তেমন আভাস পূর্বেই দিয়েছিল ‘তৌহিদী জনতা’। তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগে কেন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পুলিশ অদূরেই অবস্থান করছিল। প্রয়োজনবোধে তারা সেনাবাহিনীও ডাকতে পারত। কিন্তু মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অন্যান্য স্থানে যেমন, তেমনি এখানেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল একেবারেই নির্লিপ্ত। এ ঘটনার  পেছনে যারা জড়িত তাদের আসল উদ্দেশ্যটা আসলে কী? শুধুই নুরা পাগলার ওপর ক্ষোভ নাকি অন্য কিছু? নাকি তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে অন্য কোনো শক্তির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসাবে ভ্যবহৃত হচ্ছে বা হয়েছে?

সরকারের উপদেষ্টাদের নীরবতার কারণেই দরবার ও মাজোরে হামলাকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে বলেও দেশবাসী মনে করছে। ফ্যাসিবাদী শাসকের পরতনের পরপরই ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণেই এসব ঘটনা ঘটছে আরো ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ এর বিরোধিতা করলেও এই সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী শক্তিকে দমন করতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা জনগণ পরিলক্ষিত করছে না। অপরাধীরাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। 

নুরাল পাগলা নামে একজন মানুষ মারা গেছে। যদি তার জীবনে অন্যায় করে থাকে, তার জীবনে যদি শিরক করে থাকে, তার জীবনে যদি ভণ্ডামি করে থাকে, তার জীবনে যদি কুফরি করে থাকে, সে যদি এক দিন করে থাকে, এক মাস করে থাকে, আপনি একজন মুসলমান হিসেবে দরকার ছিল বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা করে তাকে গ্রেফতার করানো। কিন্তু সেই নুরা পাগলা যখন মারা গেল, কবরের ভেতরে তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে কবর খুঁড়ে তার লাশটাকে বের করলেন। বের করার পর তার লাশকে নিয়ে উল্লাস করতে করতে ‘আল্লাহু আকবর’ ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিয়ে দিয়ে আপনারা তার লাশটাকে পুড়িয়ে দেওয়া কোনো সভ্যতা নয়, ধর্মও নয়। ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা শুধু জীবিত অবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মৃত্যুর পরও এ সম্মান অব্যাহত থাকবে। ইসলামি আইনের একটি নীতি হলো, ‘মানবসন্তান জীবিত বা মৃত হোক সম্মানের পাত্র বলে গণ্য হবে।’ (আল মাবসুত : ৫৯/২)।

রাজবাড়ির ঘটনা মানুষের মানবিক হৃদয়কে বিদীর্ণ করেছে। কবর থেকে লাশ তুলে এনে সেটি পুড়িয়ে ফেলা কেবল আইনবহির্ভূত কাজ নয়, এটি ইসলামি শরিয়ত, মানবতা এবং সভ্যতার পরিপন্থি এক ভয়ংকর অমানবিকতা। এমন ঘটনার সাক্ষী হওয়া মানে গোটা জাতি হিসেবে আমাদের আত্মসম্মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। ইসলামে মৃতদেহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ইমানের অংশ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘কোনো মৃতদেহের হাড় ভেঙে ফেলা জীবিত অবস্থায় ভেঙে ফেলার মতোই গুনাহ।’ (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬১৬)। অতএব, মৃতদেহও সম্মানের অধিকারী। তাকে অসম্মান করা বা অপমান করা ইসলামে গুরুতর অপরাধ। ইসলামের ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যে রাসূল (সা.) বা অন্য কোনো নবী কারো লাশ কবর থেকে তুলে এনে অপমান করেছেন বা আগুনে পুড়িয়েছেন। বরং যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত শত্রুপক্ষের মৃতদেহ পর্যন্ত অসম্মান করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি অমুসলিম মৃতদেহের প্রতিও সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে একটি ঘটনা আছে- একজন ইহুদির জানাজা যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। সাহাবারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে তো ইহুদি।’ রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন : ‘সে-ও তো একজন মানব আত্মা ছিল।’ (সহিহ বুখারি : ১৩১২; সহিহ মুসলিম : ৯৬১)। অতএব, মুসলিম হোক বা অমুসলিম, কারো লাশ অপমান করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

কবর খুঁড়ে মরদেহ টেনে এনে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেলার মতো ভয়াবহ ঘটনা আমাদের রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক নৈতিকতার চরম ব্যর্থতা। আইন হাতে তুলে নেওয়া ইসলাম নয়, বরং ইসলামের নামে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড। একদিকে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সহিংসতা, অন্যদিকে প্রশাসনের দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ। রাষ্ট্রের দায় এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যদি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাসময়ে ব্যবস্থা নিত, যদি আইনের শাসন কার্যকর থাকত, তবে জনতার হাতে এ রকম নৃশংস কাজ সম্ভব হতো না। রাজবাড়ির এ ঘটনায় কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। এর ফলে আমাদের মানসিকতা ও মানবিকতার বিকৃতির পরিচয় ফুটে উঠেছে, সমাজের সচেতন অংশ যদি নিরব থাকে, তবে চরমপন্থি ও উগ্রবাদীদের সঙ্গে সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নেবে, আর রাষ্ট্রের ব্যর্থতা তখন আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

গণমানসের সংকটও এখানে স্পষ্ট। যারা এ কাজ করেছে, তারা একা নয়; তাদের চারপাশে নিশ্চয়ই শত শত দর্শক ছিল। কেউ কি প্রতিবাদ করেছে? কেউ কি এমন উন্মত্ততা নিরসনে সামনে দাঁড়িয়েছে? আমরা কেউ বিশ্বাস করি না, সমাজের সব মানুষ এমন উন্মত্ততাকে সমর্থন করেছে। সমাজের নৈতিক শক্তি এতটাই ভেঙে পড়েছে যে, অমানবিকতার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। সবাইকে স্পষ্ট ভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে, বহু মত ও পথের বাংলাদেশে মন্দির-মসজিদ-গির্জা-প্যাগোডা- থাকবে। মাজার থাকবে-বাউল-ফকিরসহ সব সংস্কৃতি থাকবে। এই দেশ সব ধর্মের, সব জাতির, সব মানুষের দেশ।

বাংলাদেশে ঔপনিবেশিককাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ঘোষণা দিয়ে কেউ কখনো মাজার ভাঙেনি। এবার ঘোষণা দিয়ে আক্রমণ হয়েছে। অনেক জায়গায় একাধিকবার আক্রমণ হয়েছে এবং শাহপরাণে হামলায় একজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। এসব ঘটনার দায়ভার ক্ষমতাসীন সরকার এড়াতে পারে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব হামলার পেছনে যেমন ধর্মতাত্ত্বিক, দার্শনিক দ্বন্দ্ব-বিতর্ক রয়েছে; তেমনি বিভিন্ন শক্তি নিজেদের স্বার্থে এতে যুক্ত থাকতে পারে। সরকারের উপদেষ্টাদের দুর্বলতা, সব সিদ্ধান্ত ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার ফলেও এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। এটা হামলাকারীরা বুঝতে পারছে না, নাকি বুঝে শুনে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য করছে তাও ভাবনাতে আনতে হবে। তারা রাষ্ট্র ও সমাজকে আরো অস্থিতিশীল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফকির লালন, খালেক দেওয়ান, আব্দুল হালিম, রাধারমণ, আরকুম শাহসহ বিভিন্ন ফকির, দরবেশ, পীর, মুরশিদের গান শুনলে দেখা যাবে যে, সেখানে ধর্মতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক জিজ্ঞাসাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যে কারণে স্বভাবতই মানুষ এতে আকৃষ্ট হয়। এ তত্ত্বগুলো দাঁড় করানোর মধ্য দিয়ে যে নতুন চিন্তা হাজির হয়, তার সঙ্গে কথিত পরকালবাদীদের একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, বিশেষত যারা ধর্ম বলতে পরকালকেই বোঝে। তারা আক্রমণের শুরুতে গাঁজার কথা বলে, অথবা জমি নিয়ে বা আধিপত্য নিয়ে মারধর কিংবা দানের বাক্স কার কাছে আছে, এসব দ্বন্দ্ব এসে হাজির হয়। এটা বড় কোনো বিষয় ছিল না। তবে এখন এটিকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, রাষ্ট্র এখন খুবই দুর্বল।

আমাদের দেশের একটা শ্রেণি চায় না যে, মানুষের ভেতর যে প্রেমের চর্চা এতদিন ধরে হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে; সেই ধারাটা চলমান থাকুক। তারা নিজেদের জন্য একে হুমকিস্বরূপ মনে করে। মাজার শরিফ, আখড়া, আশ্রম, দরগা শরিফ–সেখানে সব সময় শুদ্ধচিন্তা, প্রেমের চর্চা হয়। সেখানকার সাঁই মানবতার মন্ত্রে দীক্ষিত, শিষ্যের ভেতরে সেটাই প্রতিষ্ঠিত করেন। যে নামেই ডাকুক, সব মানুষই এক স্রষ্টার সৃষ্টি। আমাদের দেশে শান্তির ধর্ম এসেছে ১০৫৩ সালে নেত্রকোনার মদনে শাহ মুহাম্মদ সুলতান কমরউদ্দিন রুমির (র.) মাধ্যমে। তিনি ওই অঞ্চলে মারফতি ঘরানার ইসলাম চর্চা করেন। এ ধারাটাই বাংলাদেশে শক্তিশালী। যারা এখন ক্ষমতায় আছে, দায়দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। তারা জানে কোন কোন জায়গায় আঘাত আসতে পারে। তারা যদি আগে থেকে ঘোষণা দিত যে, মাজার কিংবা ধর্মীয় কোনো জায়গায় আঘাত করা যাবে না, তাহলে কিন্তু এমনটা হতো না। প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেওয়ার পরই কিন্তু মাজার ভাঙা কমে এসেছে। তিনি যদি প্রথম থেকেই বলতেন যে, এটা আমাদের ঐতিহ্য, এটা আমাদের জাতিগত পরিচয়ের জায়গা; তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। আসলে গোটা বিষয়ই গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। মানুষের প্রতি সম্মান ও তার মর্যাদা রক্ষা করতে না পারাটা অধর্মেরই অংশ; তা সে মানুষ যে ধর্মেই বিশ্বাসী হোক কিংবা অবিশ্বাসী হোক না কেন। 

রাজবাড়ীর ঘটনাটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এটি আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক বিবেক ও রাষ্ট্রীয় সক্ষমতার ওপর এক কঠিন প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। রাজবাড়ীর কবর থেকে মরদেহ তুলে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা কেবলই কী একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? না এটি আমাদের ভেতরের অন্ধকারের প্রতিফলন? সেই অন্ধকারকে দূর করার দায়িত্ব আমাদের সবারÑ রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি মিলেই। নইলে ইতিহাসে আমরা কেবল কলঙ্কের পাতাতেই স্মরণীয় হয়ে থাকব। জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে হায়রে বাংলাদেশ! মুসলমান মুসলমানের চামড়া খুবলে খাচ্ছে। মুসলমান মুসলমানের লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলছে! এ কোন বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি আমরা। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনা কি তাহলে পদদলিত হচ্ছে?

লেখক : রাজনীতিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

কেকে/ এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  মৃত্যু   কবর   গোলাম মোস্তফা ভুইয়া  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close