পদ্মার ভাঙনে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে কাঁচিকাটায় ১৫১ নম্বর উত্তর মাথা ভাঙ্গা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন গয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে শতাধিক স্থানীয় ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার বিকল্প কোন জায়না না থাকায় শিক্ষকরাও বিব্রতকর অবস্থা আছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, স্কুলটি গেলো ৮ বছর আগে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যায় ১ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করে এলজিইডি। নির্মাণের ৮ বছরের মাথায় পদ্মায় ভাঙ্গনের মুখে বিলিন হয়ে হয়ে পড়েছে ১৫১ নম্বর উত্তর মাথা ভাঙ্গা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামক স্কুল ভবনটি। এ ছাড়াও গত সাত দিনের পদ্মার আগ্রাসী ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেছে ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা ইউনিয়নের চরবার্নিয়াল, শীবস্যাম, উত্তর মাথাভাঙ্গসহ ৪টি গ্রাম।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর ভাঙ্গনে ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙ্গা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলিন হয়ে পড়েছে।
পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ইমরান বলেন, ‘আর ২ মাস পরে আমাগো পরীক্ষা। এখন স্কুলডা ভাইংগা নদীতে নিয়ে গেছে। আমরা কই যাইমো? আমাগো পড়ালেখার কি অইবো! আমাগো গ্রামের অনেকেই বাড়িঘর লইয়া গেছেগা। আমার বাবা কইছে আমরাও যাইমোগা।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল মামুন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমরা বন্ধ করে যাওয়ার সময় বিদ্যালয়টি থেকে নদীর দূরত্ব প্রায় ১৫০ ফুটের উপরে ছিলো। আজ এসে দেখি নদী স্কুলটির ৪ ভাগের ৩ ভাগ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আমরা বিদ্যালয়টি পুনরায় কোথায় স্থাপন করবো, তা বলতে পারছি না। আমাদের সমস্যার কথা আমরা উপজেলার স্যারদের জানিয়েছি। আমাদের বিদ্যালয়ের মোট ৮৭ জন শিক্ষার্থী ছিলো। নদী ভাঙ্গনের কারণে এখন আছে ৫৩ জন। যার মধ্যে বিদ্যালয়ে এসেছে ২৯ জন।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার আল মুজাহিদ দিপু বলেন, ‘২০১৬ সালে বিদ্যালয় বিহীন গ্রামে পিইডিপি-৪’-এর আওতায় ১ হাজার ৫০০ বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় এ বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। ২০১৭ সালে বিদ্যালয়ের একতলা ভবন নির্মাণ হয়। যা এখন ৮ বছরের মাথায় নদী ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেলো। বিদ্যালয় ভবনটি বিলিন হওয়ায় আমরা শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নিব।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুস ছোবাহান মুন্সী বলেন, ‘বিদ্যালয়টি আজ হয়ত পুরোটাই নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। নদী বিদ্যালয় ভবনের কাছাকাছি চলে এসেছে। কর্তৃপক্ষের অনুমোতি ব্যতীত এ ভবন নিলাম করা যাবে না। তাই, নিলাম দিতে পারিনি ‘
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘কাচিকাটা ভাঙ্গন প্রবন এলাকাগুলোতে টেম্পোরারিভাবে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধে চেষ্টা করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে একটি বাধের জন্য প্রস্তাবনা মন্ত্রনায়য়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে আসলে আগামী শুকনো মৌসুমে বাধের কাজ শুরু করা হবে।’
কেকে/ এমএ