লালমনিরহাটের আদিতমারীতে বিএনপি নেতা বিরুদ্ধে রাস্তা সংস্কার কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ও মূল ঠিকাদারকে না জানিয়ে রাস্তা খননের অভিযোগ ওঠেছে। কাজের অনুমান বা প্রাক্কলন না বুঝে ভাল রাস্তা খুঁড়ে ফেলায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দীর্ঘদিন থেকে খুঁড়ে ফেলে রাখা এবং কাজ না করায় বৃষ্টির পানি জমে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক জনগণের চলাচলের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ ও চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের অন্তর্গত কুমড়ীরহাট-কালিস্থান ভায়া কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদগামী ২ হাজার ১০০ মিটার সড়ক উন্নয়ন পাকাকরণের কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৮৭ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা। কাজটির জন্য গত ১৭ মে দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং ১৯ জুন দরপত্র মূল্যায়নের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার ‘জাকাউল্লাহ এন্ড ব্রাদার্স লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডারের বাসিন্দা এলাহী নামের এক ঠিকাদার কাজটি নিয়ে ইতোমধ্যে পারফরম্যান্স সিকিউরিটি জামানত জমা দিয়েছেন।
এদিকে বিএনপির জেলা ও উপজেলার কিছু অতি উৎসাহী নেতা কর্মী কাজটি তাকে না করার জন্য নানা রকম হুমকি ও চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতা প্রভাব খাটিয়ে রাস্তা সংস্কারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালান।
অভিযোগ রয়েছে, একটি গ্রুপ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইদ্রিস আলী ও যুগ্ম-আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক ২১ লাখ টাকার বিনিময়ে কাজটি মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে নেওয়ার চেষ্টা করেন। অপরদিকে, যুবদল নেতা মিজানুর রহমানের মেসার্স এপি এন্টারপ্রাইজ ও জেলা বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনের সার্জিক এন্টারপ্রাইজ কাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাপ সৃষ্টি করে এলাহীকে কাজ করতে নিষেধসহ নানা শর্ত বেধে দেন। এলাহী বকস তাদের সেই শর্তে রাজি না হলে তারা গত ১৩ আগস্ট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অনুমতি ও মূল ঠিকাদার অনুগত ছাড়াই মিজানসহ তার লোকজন রাস্তাটি দখল করে কাজ শুরু করে দেন। পরে ভেকু মেশিন দিয়ে বক্স কাটিং (মাটি কাটা) শুরু করে প্রায় ৫ শত ফুট রাস্তা খুড়ে ফেলে। জানার পর প্রশাসন কাজটি বন্ধ করে দেয়।
এদিকে, ১ মাস হয়ে গেলেও রাস্তা খুড়ে ফেলে রেখে কাজ না করার কারণে বৃষ্টির পানিতে রাস্তাটি কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। ফলেযান চলাচল করতে পারছে না। এতে এলাকার হাজার হাজার মানুষের একমাত্র প্রধান রাস্তাটিতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা বিকল্প উপায়ে অন্য রাস্তায় বহু দূর ঘুরে উপজেলা জেলায় যেতে হচ্ছে। কাজটি বন্ধ থাকাতে এলাকার লোকজন সন্দেহ পোষণ করছে কেন বা রাস্তা খুঁড়ল আবার কেন বা কাজ বন্ধ করল? এ নিয়ে এলাকার জনগণের মাঝে প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা নানা কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।
গ্রামের দীর্ঘদিনের ব্যবহৃত রাস্তাটি খুঁড়ে কাজ না করার ফলে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, ও মাদ্রাসার শত শত ছাত্র-ছাত্রী যানবাহনের অভাবে পাঁয়ে হেটে যেতে হচ্ছে। অন্যদিকে সবজি উৎপাদন এলাকা হিসেবে খ্যাত কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি রাস্তার কারণে যানবাহন চলাচল না করায় বিকল্প উপায়ে মাথা করে বাজারে নিয়ে যেতে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বিকল্প রাস্তায় ঘুরে বেশি ভাড়া দিয়ে হাটে-বাজারে সবজি নিয়ে যেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘মূল ঠিকাদারে নির্দেশ মোতাবেক রাস্তার কাজ শুরু করেছি। জাকাউল্লাহ এন্ড ব্রাদার্স লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে থেকে এলাহীকে কোন কাজ দেয়নি।’
কাজ কেন বন্ধ? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত বালুর ব্যবস্থা না থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে।’
জাকাউল্লাহ এন্ড ব্রাদার্স লিমিটেডের পক্ষে তুষভান্ডারের বাসিন্দা এলাহী বলেন, ‘কাজটি করতে অফিসিয়ালি সব কাগজপত্র ও অর্ডার পেয়েছি। কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।’
প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক বলেন, ‘সম্প্রতি তারা অফিসের নির্দেশ ও অনুমান বা প্রাক্কলন না বুঝে রাস্তা খুঁড়ার কাজ শুরু করে। তবে কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কাওছার আলম বলেন, ‘মূল ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
কেকে/ এমএ