রোববার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫,
২৩ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: মেসির জোড়া গোলে আর্জেন্টিনার বড় জয়      আ.লীগের ভয়ংকর পরিকল্পনা      বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাড়ছে নারীবিদ্বেষ      পুলিশের ওপর হামলা করে হাতকড়াসহ আসামি ছিনতাই      ৩০০ আসনের সীমানার চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ      ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো রিট শুনবে না হাইকোর্ট      হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারির আবেদন      
অর্থনীতি
শ্রম আইনের নতুন সংশোধনী শ্রমবাজারকে অস্থিতিশীল করবে
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৫, ১০:৩১ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

# শ্রম আইনের খসড়া পরিবর্তন চায় বিইএফ
# ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া অতিরিক্ত সরলীকরণ, এফডিআই নিরুৎসাহিত হবে 
# একাধিক দুর্বল শ্রমিক সংগঠন তৈরির চেয়ে একটি বা দুটি কার্যকর ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত


বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, সামাজিক সংলাপ ছাড়াই নতুন আইন চাপিয়ে দিলে তা টেকসই হবে না; বরং শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার পরিবর্তে অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে দেবে। বিশেষত মাত্র ২০ জন শ্রমিকের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে একাধিক দুর্বল সংগঠনের জন্ম দিতে পারে, যা উৎপাদনশীলতা ও শিল্পসম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও নিরুৎসাহিত হতে পারে। 

শনিবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানের মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) কার্যালয়ে আয়োজিত বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা এসব আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিইএফের সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কামরান টি রহমান, নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও বিজিএমইএর শ্রমবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এ এন এম সাইফুদ্দিন প্রমুখ।

বিইএফের সভাপতি ফজলে শামীম এহসান শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে তীব্র শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, মাত্র ২০ জন শ্রমিকের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের সুযোগ দিলে তা শ্রমবাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে একাধিক নামসর্বস্ব ইউনিয়নের উদ্ভব হবে, যেখানে ব্যবস্থাপনা পর্যায়কে বারবার চাপের মুখে পড়তে হবে। এতে কর্মক্ষেত্রে বিরোধ ও বিভাজন বাড়বে, উৎপাদনশীলতা কমবে এবং শিল্পে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি অনাকাক্সিক্ষভাবে অন্যায্য চর্চা ও সুযোগসন্ধানী কার্যকলাপকে উৎসাহিত করবে, যা সুষ্ঠু শিল্পসম্পর্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্প খাত— বিশেষত পোশাকশিল্প ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কড়া নজরদারির মধ্যে রয়েছে। নতুন সংশোধনী যদি অস্থিরতা সৃষ্টি করে, তবে উৎপাদন ব্যাহত হবে, সময়মতো অর্ডার ডেলিভারি সম্ভব হবে না। এতে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়বে। তদুপরি, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ‘রেসিপ্রক্যাল ট্যারিফ’ নীতি ও নতুন শুল্ক কাঠামোর ফলে যে রপ্তানি সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ক্রেতারা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থেকে সহজেই অন্য দেশে অর্ডার স্থানান্তর করতে পারে, ফলে বাংলাদেশ তার গুরুত্বপূর্ণ বাজার হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।

ফজলে শামীম এহসান বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অতিরিক্ত সরলীকরণ বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রেও নিরুৎসাহ তৈরি করবে। বিনিয়োগকারীরা সবসময় স্থিতিশীল, পূর্বানুমানযোগ্য এবং ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ খোঁজেন। যদি তারা মনে করেন, শিল্প খাত বারবার শ্রম বিরোধ ও অস্থিরতার মধ্যে পড়বে, তবে তারা বিকল্প বিনিয়োগ গন্তব্য বেছে নেবেন। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উভয়ই বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, পাঁচ হাজার শ্রমিকের কারখানায় মাত্র ২০ জনের একটি ইউনিয়ন পুরো শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে না। আবার সর্বোচ্চ পাঁচটি ইউনিয়ন করার সুযোগ থাকলে ৫ হাজার শ্রমিকের বিপরীতে মাত্র ১৫০ জন সদস্য মিলেও পাঁচটি ইউনিয়ন হয়ে যাবে। এতে শ্রমিকদের সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে না।

বিইএফ সভাপতি সতর্ক করে বলেন, শ্রম আইন সংশোধনের কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে শিল্পে বারবার অস্থিরতা তৈরি হবে। অতীতে অস্থিতিশীলতার কারণে যেমন কম্বোডিয়ায় বিনিয়োগ কমে গিয়েছিল এবং ভিয়েতনাম সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল, বাংলাদেশও একই ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারী যদি শোনে মাত্র ২০ জন শ্রমিক মিলে ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারবে, তবে তারা ভুলেও বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য বিবেচনায় আনবে না।’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষই যখন এ ধরনের প্রস্তাবের বিপক্ষে, তখন কার স্বার্থে এ পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে? তিনি আরো বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনাম ও ভারতে এ ধরনের চাপ নেই। অথচ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ভিয়েতনামে মাত্র একটি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে শিল্পকারখানার জেনারেল ম্যানেজার নিজেই সেই ইউনিয়নের সভাপতি। তবুও শ্রমিকদের অধিকার সেখানে অক্ষুণ্ন রয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনের আরেকটি ধারা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ১০০ জন শ্রমিক থাকলেই ভবিষ্যৎ তহবিল চালু করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে, যা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখা দরকার। তার মতে, এ ধরনের প্রস্তাব অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরি করবে এবং বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো সংকটময় করে তুলতে পারে।

এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, বর্তমানে দেশের শ্রমবাজারে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মানুষ রয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ১ কোটি থেকে ১ কোটি ২০ লাখ শ্রমিক আনুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছেন। অন্যরা অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছেন। অথচ বিদ্যমান শ্রম আইন মূলত আনুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সীমাবদ্ধ।

বিইএফের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ শ্রম আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় সামাজিক সংলাপের অভাবের সমালোচনা করে বলেন, শ্রমিকদের জন্য একাধিক দুর্বল ট্রেড ইউনিয়ন তৈরির সুযোগ দেওয়ার চেয়ে একটি বা দুটি কার্যকর সংগঠন গড়ে তোলাই বেশি বাস্তবসম্মত। তার মতে, মালিকরা শ্রম আইন পরিবর্তনের বিপক্ষে নয়, বরং একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু শ্রমবাজার ও আইন চায়। তবে সেই আইনের কার্যকর প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন যথাযথ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ও রেগুলেটরি গাইডেন্স, যেগুলোর ওপর পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে রেখে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়; বরং তাদেরকে অংশীদার হিসেবে সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে। এজন্য একটি সঠিক ইকোসিস্টেম ও অবকাঠামো তৈরি জরুরি, যেখানে মালিক অন্যায্য আচরণ করতে পারবে না, আবার শ্রমিকরাও নিয়মতান্ত্রিক ও সুস্থ চর্চার মধ্যে থেকে কাজ করবে। এভাবে একটি আস্থার পরিবেশে উভয় পক্ষ দরকষাকষির সুযোগ পাবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে শ্রমিক-মালিক আস্থা গড়ে তুলতে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনো দেখা যায়নি।

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  শ্রম আইন   নতুন সংশোধনী   শ্রমবাজার  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সুনামগঞ্জে জমিয়ত নেতা হত্যার ‎প্রতিবাদে বাহুবলে মানববন্ধন
মতিউরকাণ্ডে পুলিশের ১১ সদস্য বরখাস্ত
কমলগঞ্জে ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী আটক
বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় আসবে
তেজগাঁওয়ে ঝটিকা মিছিলের আয়োজক সুইটি গ্রেফতার

সর্বাধিক পঠিত

রূপগঞ্জে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন
হাটহাজারী মাদ্রাসা নিয়ে কটুক্তিকারী যুবক আটক
তেজগাঁওয়ে ঝটিকা মিছিলের আয়োজক সুইটি গ্রেফতার
লালপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৪
গোদাগাড়ীতে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মেহেদী গ্রেফতার

অর্থনীতি- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close