পটুয়াখালীর বাউফলে কিশোরীকে হত্যার অভিযোগে বাবা-মা, দুলাভাই গ্রেফতার। এক সপ্তাহ পর ঊর্মী হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ।
বুধবার (২৭ আগস্ট) ওই ঘটনায় কিশোরীর বাবা-মা, দুলাভাইকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠায় বাউফল থানা পুলিশ।
পটুয়াখালীর বাউফলে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে ঊর্মী নামের এক কিশোরীকে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টা চালানো হয়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে উর্মীকে হত্যা করে নিখোঁজ নাটক করে পরিবার। পরেরদিন শুক্রবার সকালে উর্মীর পরিবার থানায় এসে সাধারণ ডায়রি না করে চলে যান। ২দিন পর শনিবার সকাল ৮টায় পাশের কুম্ভখালী খাল থেকে উর্মীর মরদেহ উদ্ধার করেন মামা সবুজ বয়াতী।
ওই ঘটনায় মেয়ের বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই বাউফল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তায় পুলিশি নজরে থাকেন উর্মীর মা আমেনা বেগম (৪০), বাবা নজরুল বয়াতি (৪৫) ও দুলাভাই কামাল হোসেন (৩২)। অবশেষে ঘটনার ৭দিন পর রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করে থানায় আনলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন আটক ব্যক্তিরা।
পরে বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরের পরে তাদের ৩ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। সূত্র আরো জানায়, উর্মীর মা আমেনা বেগমের সঙ্গে বড় বোন তামান্নার স্বামী কামাল হোসেনের পরকীয়া সম্পর্ক দেখে ফেলেন ঊর্মী।
ওই ঘটনার জের ধরে ২১আগস্ট রাত দেড়টার দিকে মা আমেনা বেগম, বাবা নজরুল ও দুলাভাই কামাল মিলে ঊর্মীকে ব্যাপক মারধর করেন। একপর্যায়ে মা আমেনা উর্মীর গলাটিপে ধরেন, দুলাভাই কামাল হোসেন হাত ধরেন ও বাবা নজরুল ইসলাম বয়াতী পিঠে আঘাত করে হত্যা করে উর্মীকে বাড়ীর পার্শ্ববর্তী নারায়নপাশা নদীতে ফেলে দেয়। সূত্র আরও জানায় উর্মীর মেঝ বোন লামিয়ার সঙ্গে শ্বশুর বাড়ির ঝামেলা চলছিলো।
ওই ঘটনার সালিশ বিচার করেন সুর্যমনি ইউপির ইন্দ্রকুল গ্রামের মজিদ হাওলাদারের ছেলে ফিরোজ হাওলাদার। সেই সুবাধে উর্মীদের বাড়িতে যাতায়াত করতো ফিরোজ হোসেন এবং দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন উর্মীর মা আমেনা বেগমের সঙ্গে। তখন ফিরোজের লালসার দৃষ্টি পড়ে তিন বোনের দিকে। মা আমেনা স্বীকার করেন উর্মীকে তুলে দেবেন তার হাতে। কিন্তু মায়ের এ সম্পর্কের বাধা হয়ে দাঁড়ান উর্মী।
নিহত উর্মীর বড় বোর তামান্না বলেন, দুই সন্তানের বাবা ফিরোজ হাওলাদার আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। ছোট বোনকে তার কাছে বিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন মা। তবে তার স্বামী কামাল হোসেনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতারুজ্জামান সরকার বলেন, ঘটনার পর থেকে ওই তিনজনই আমাদের সন্দেহের তালিকায় ছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দায় স্বীকার করেছেন।
পুলিশ সুপার পটুয়াখালী (বাউফল সার্কেল) আরিফ মুহাম্মদ সাকুর প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, তিনজন গ্রেফতার হয়েছে, অজ্ঞাত আরো রয়েছে। তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
কেকে/এএস