মসলা জাতীয় ফসলের মধ্য আদা অন্যতম। তরকারি ও রোগ নিরাময়ে আদার ব্যবহার আদিকাল থেকে চলে আসছে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আদা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আদার এ আমদানি নির্ভরতা কমাতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দিন দিন বস্তা আদা চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। চলতি বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় কৃষকদের বস্তা, বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে চাষ হওয়া আদা থেকে ১২ হাজার কেজি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের ভৈরবগঞ্জ, আশিদ্রোন ইউনিয়নের সুনগইড়, রামনগর, মোহাজেরাবাদ, দিলবরনগর, খলিলপুর ও পারেরটংসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করছেন। কৃষক মুক্তার হোসেন জানান, গত বছর তিনি ১২শ বস্তায় আদা চাষ করে ৭০০ কেজি ফলন পেয়েছলেন। কৃষি অফিস তার উৎপাদিত আদা থেকে ৩০০ কেজি বীজ সংগ্রহ করেছিল ১৫০ টাকা কেজি দরে, বাকি আদা বাজারে বিক্রি করে তিনি ভালো আয় করেছেন। চলতি বছর তিনি ৫শতাধিক বস্তায় আদা চাষ করেছেন এবং ভালো ফলনের প্রত্যাশা করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, বস্তায় আদা রোপণের উপযুক্ত সময় এপ্রিল-মে (চৈত্র-বৈশাখ) মাস। আদা রোপনের ১৫-২০ দিন পূর্বে বস্তার মাটি প্রস্তুত করে নিতে হয়। এ জন্য উর্বর মাটি, জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োজন। প্রতি বস্তার জন্য ১০-১২ কেজি মাটি, ৫ কেজি গ্যাস মুক্ত গোবর, ২ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট, ১ কেজি ছাই, ২৫ গ্রাম ডিএপি সার, ১০ গ্রাম পটাশ সার, ৫ গ্রাম বোরন সার, ৫ গ্রাম জিংক সার এবং ১০ গ্রাম দানাদার কীটনাশক প্রয়োজন হয়। আদার ভালো ফলন পেতে বর্স্তায় আদা রোপণের ৫০ দিন, ৮০ দিন ও ১১০ দিন বয়সে প্রতি বস্তায় ২-৩ গ্রাম পটাশ ও ৩-৫ গ্রাম ইউরিয়া সার একত্রে মিশিয়ে গাছের গোড়া থেকে একটু দূরে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাঝে মধ্যে কার্বেনডাজিম ও প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
বস্তায় আদা চাষ। ছবি : খোলা কাগজ
সাধারণত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে বস্তা থেকে আদা উঠাতে হয়। জাত ভেদে প্রতি বস্তয় ০.৫ থেকে ১.০ কেজি পর্যন্ত বা অনেক ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
শ্রীমঙ্গল কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব আলম খান বলেন, আমার ভৈরব বাজারে মুক্তার হোসেন নামে এক কৃষক গতবছর ১ বিঘা পতিত জমিতে ১২শ বস্তায় আদা চাষ করে ৭শ কেজি আদা উৎপাদন করে সাফল্য পেয়েছেন। এবারও তিনি পতিত জমিতে ৫শতাধিক বস্তায় আদা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। আমরা কৃষি অফিস থেকে কৃষককে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান জানান, উপজেলার কৃষকরা দিন দিন বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকেছেন। আশ্রিদোন ব্লকের সুনগইড় এলাকার আব্দুল খালিক এবং পারেরটং এলাকার ফুল মিয়াসহ বেশ কয়েকজন কৃষক এবার ৩হাজার বস্তায় আদা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আমরা চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শসহ নানাভাবে সহযোগিতা করছি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন জানান, আদা লাভজনক একটি মসলা জাতীয় ফসল। বস্তায় আদা চাষ করতে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলে গত ৩বছর যাবত বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। দিন দিন বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলায় এবার পতিত জমিতে ১৫হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ১২হাজার কেজি আদা উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৩ লাখ টাকা। কৃষি অফিস থেকে স্থানীয় কৃষকদের বিনামূল্যে বস্তা, বীজ, সার, কীটনাশকসহ নানাভাবে সহযোগিতা করছি।