চারিদিকে পানিতে থৈ থৈ করছে। তলিয়ে গেছে শত শত হেক্টর জমিতে সদ্য রোপন করা আমন ও আউশ ধান। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি। বাদ পড়েনি যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটিও। তলিয়ে যাওয়া সেই রাস্তার ওপরে ভিড় করছেন মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ পায়ে হেঁটে কেউবা বিভিন্ন যানযোগে এসে ভিড় করছেন সেখানে। তুলছেন নানা স্টাইলের ছবি। তৈরি করছেন শর্টস ভিডিও, ছাড়ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে—এ যেন ভিউ বাণিজ্যের এক অন্যতম কেন্দ্র।মাঝে মাঝে বিভিন্ন এলাকা থেকে বাইচের নৌকা এসে মাঝি মাল্লাদের সহযোগিতায় মেতে উঠছেন নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায়।
দৃশ্যটি মাগুরার শালিখা উপজেলা সদর আড়পাড়া ইউনিয়নের টিওরখালী গ্রামের। দেখে মনে হচ্ছে কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। একদিকে আমন চাষিদের বোবা কান্না, অন্যদিকে ধানের ওপর দিয়ে চলিয়া যাওয়া মাঝি মাল্লাদের নৌকা বাইচের আনন্দ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উজগ্রাম থেকে টিওরখালি গ্রামে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে রাস্তার বিভিন্ন অংশ। যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ওই গ্রামের লোকেরা ব্যবহার করছেন নৌকা। এদিকে তলিয়ে যাওয়া রাস্তার ওপরে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এসে তৈরি করছেন শর্টস ভিডিও, আপ করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কেউ আবার মত্ত থাকছেন ছবি তোলার কাজে। অনেকে আবার রাস্তার ওপরেই মোটর বাইকের কাদা ধোয়ার কাজ সারছেন।
অপরদিকে তলিয়ে যাওয়া ধানের জমিতে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ওই এলাকার জেলেরা। কেউ ধরছেন বরশি দিয়ে কেউ আবার জাল দিয়ে। দিনশেষে পাওয়া মাছগুলো বিক্রি করছেন সেখানকার দর্শনার্থীদের কাছেই। ওদিকে পানি বাড়াতে নৌকা চালকদের যেন পোয়াবারো। দর্শনার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা নিয়ে বিলের বিভিন্ন অংশ ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন তারা।
এমনি একজন নৌকা চালক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বছরের অন্য সময় অন্যের জমিতে কাজ করে টাকা আয়করি। এই মৌসুমে পানিতে সবকিছু তলিয়ে যাওয়ায় দর্শনার্থীদেরকে মাঠঘাট ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি এবং টাকা আয় করছি।
ঘুরতে আসা মাগুরা সদর উপজেলার আমুড়িয়া গ্রামের দর্শনার্থী পারভেজ হাসান বলেন, আমি প্রতিদিন একবার করে এখানে আসি। এখানের পানিতে আমার মোটর বাইকটা পরিষ্কার করি, পাশাপাশি ছবি তুলতে আমার অনেক ভালো লাগে।
শালিখা উপজেলার হাজরাহাটি গ্রাম থেকে আসা ইসমাইল হোসেন নামে এক দর্শনার্থীর বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখানকার তলিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও দেখে এখানে এসেছি। এসে আমার একদিকে যেমন ভালো লাগছে অন্যদিকে খুবই খারাপ লাগছে। কারণ, এখানে অনেক জমি এবং অনেক বাড়িঘর তলিয়ে গেছে যা আসলেই খুবই দুঃখজনক।
এ বিষয়ে উপজেলা সদর আড়পাড়া ইউনিয়নের উজগ্রামের অলিয়ার রহমান বলেন, আমাদের এই বারেঙ্গার খালের যে স্লুইজ গেইট করা হয়েছে তা দিয়ে পানি ঠিকভাবে বের হতে পারে না। আর তাছাড়া খালটিকে দীর্ঘদিন খনন করা হয় না। যার কারণে উভয় অংশের পানি মাঠে জমে মাঠ তলিয়ে গেছে। বারবার তলিয়ে যাওয়াই এই অঞ্চলের মানুষ কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। আর তাই খালটিকে খনন পূর্বক পানি বের করে অঞ্চলটিকে বন্যা কবলিত অঞ্চল মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
কেকে/এজে