রংপুর বিভাগের পাঁচটি প্রধান নদ-নদীর ৭৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশ এলাকাই রয়েছে ভয়াবহ ভাঙনের ঝুঁকিতে। পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করছে মাত্র ১০০ কিলোমিটার এলাকায়, যার ব্যয় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। তিস্তা নদীতে অস্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে আরো ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে বিশাল অংশ অরক্ষিত থাকায় প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ছেন নদী অববাহিকার মানুষ।
গবেষণা বলছে, শুধু তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রে প্লাবন ও ভাঙনে প্রতিবছর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন জেলার নদীপাড়ে এখন প্রতিদিনই ঘটছে ভাঙন। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলার প্রবল স্রোতে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও অবকাঠামো নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। গাইবান্ধার করতোয়া ও তিস্তার ২১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অন্তত ২০টি পয়েন্টে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কুড়িগ্রামের রৌমারী, চিলমারী, উলিপুর, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জসহ নদীপারের বহু মানুষ বছরের পর বছর ধরে নদীভাঙনে সর্বস্ব হারাচ্ছেন।
প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা, তবুও অরক্ষিত এলাকা বিশাল। রংপুর বিভাগের পাঁচটি নদ-নদীর ৭৫০ কিলোমিটার নদীপথের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের আওতায় আনা হয়েছে মাত্র ১০০ কিলোমিটার এলাকা। এর মধ্যে দুধকুমার নদে ৬৯২ কোটি টাকা, ধরলায় ৬২৯ কোটি টাকা এবং ব্রহ্মপুত্র নদে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। আর তিস্তা নদীতে নেওয়া হয়েছে ২০০ কোটি টাকার জিও ব্যাগ ডাম্পিং প্রকল্প।
তবে এখনও ৬৫০ কিলোমিটার নদী তীরে নিজ স্থায়ী বাঁধ। সাময়িক সংস্কার করে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার কাজে ২০২৪ সালে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা এবং চলতি বছর বরাদ্দ হয়েছে ২০ কোটি টাকা।
ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “ভাঙনে আমাদের তিনবার বাড়ি বদলাতে হয়েছে। সরকারের প্রকল্প আমাদের পাড়ায় কখন আসবে জানি না।” আরেকজন কৃষক বলেন, “সারা বছর চাষ করি, ভাঙনে জমি চলে গেলে সব শেষ হয়ে যায়।”
‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’-এর সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, “বারবার ভাঙন প্রতিরোধের কথা শোনা গেলেও, মাঠে বাস্তবায়ন নেই। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এই দুর্যোগ রোধ সম্ভব নয়।”
রিভারাইন পিপলের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, “নদী ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া এই বিশাল ক্ষতির লাগাম টানা যাবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড যে সব প্রকল্প গ্রহণ করেছে, তা জনবন্ধক না হয় শুধুই অর্থের অপচয় হচ্ছে।”
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, “চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে নদী ভাঙন অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে।” আর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, “বাঁধ নির্মাণ, সুরক্ষা প্রকল্প এবং জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলমান রয়েছে।”
কেকে/এআর