ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের সোনারামপুর ইউনিয়নের কাজী হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে পরকীয়া, নারী কেলেঙ্কারিতে হাতেনাতে ধরা পড়ার ভিডিওসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ভিডিও প্রকাশ হয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহু বাল্যবিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার কারিগর হেলাল কাজী গত ২৫ জুন গভীর রাতে সোনারামপুর ইউনিয়নের চরমরিচাকান্দির গ্রামের বিলপাড় মহল্লার ট্রাক চালক সুলতান মিয়ার স্ত্রীর সাথে অনৈতিক কাজ করতে গেলে এলাকাবাসী হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে, এলাকাবাসী তাকে উত্তম মাধ্যম দেয়। কাজী হেলাল কতিপয় যুবককে ম্যানেজ করে সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসতে সক্ষম হয় বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান।
আফজাল মিয়া নামে এক এলাকাবাসী জানান, ২ বছর আগে এ মহিলার সাথে অনৈতিক কাজ করার সময় একই কায়দায় ধরা পড়ার পর, ম্যানেজ করে উদ্ধার হন। অথচ,কাজী হেলাল উদ্দিন ৪ টি বিয়ে করেছেন।
এ বিষয়ে চরমরিচাকান্দি গ্রামের মহিলা ওয়ার্ড মেম্বার হনুফা বেগম বলেন, কাজী হেলাল একজন দুশ্চরিত্র কাজী। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া দরকার।
স্থানীয় আরেক ওয়ার্ড মেম্বার জামাল মেম্বার বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে নিকাহ রেজিস্ট্রার পদ বাতিল করা দরকার।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক আওয়ামী লীগের এমপি ক্যাডার তাজের ভাগিনা জনি চেয়ারম্যানকে ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পায়।
গত ৫ আগস্টের পর তিনি নিজেকে বিএনপি ঘরানার কাজী হিসেবে দাবি করে নানান অনিয়ম, দুর্নীতি ও নারীঘটিত কেলেঙ্কারি করতে থাকেন। এ নিয়ে একাধিকবার সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও জেলা রেজিস্ট্রার অদৃশ্য কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকেন।
উল্লেখ্য, বিবাহের নামে নিকাহ রেজিস্ট্রারের (কাজি) বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহ নিবন্ধনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবত দাবি করে আসছে এলাকাবাসী।
সোনারামপুর ইউনিয়নের দুই যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, আমরা কাবিননামা তুলতে চাইলে একজনের কাছ থেকে ১১ হাজার ও অন্যজনের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন কাজী হেলাল উদ্দিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা তথা বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী বাল্য বিবাহের স্বীকার হন সোনারামপুর ইউনিয়নের মেয়েরা। তারপর রয়েছে, উজানচর ও ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়ন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, হেলাল কাজীর বিষয়টি আমরা শক্তিশালী তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবো। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও জেলা রেজিস্ট্রারকে জানানো হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রেজিস্ট্রার খালিদ মোহাম্মদ বিন আসাদ মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি জানলাম। এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ আমলে নিকাহ নামা ও কোটিপতি কাজীর নামে নানা অনিয়ম করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া হেলাল কাজীর বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও উপর মহল সামাল দিতে তিনি ‘ম্যানেজ মাস্টার’ হিসেবে প্রসিদ্ধ বলে অভিযোগ রয়েছে।
কেকে/ এমএস