আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত অনেক নামকরা খেলার জন্মস্থান ইংল্যান্ড। এ তালিকায় রয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বেজবল, টেনিস এবং রাগবিও। রাগবির রয়েছে খুব চমৎকার এক ইতিহাস। ইংল্যান্ডের একটা এলাকা আছে যার নাম রাগবি। সেখানে একই নামের একটা স্কুলও আছে—রাগবি স্কুল। সেই স্কুলের ছাত্র ছিল উইলিয়াম ওয়েব এলিস।
ছবি : সংগৃহীত
১৮২৩ সালে এলিস একবার ফুটবল খেলতে খেলতে হঠাৎ করে বল হাত দিয়ে ধরে দৌড় দিয়েছিল। এরপর রাগবি স্কুলের ছাত্ররা এ বিষয়টিয় মজা পেতে শুরু করে এবং হাত দিয়ে ফুটবল খেলা শুরু করে। কালক্রমে তাদের এই খেলা ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারপাশে এবং স্কুলের নামানুসারে এ খেলার নাম হয় রাগবি। যদিও এই গল্পের পক্ষে-বিপক্ষে প্রচুর মতো রয়েছে, তবে ওয়েব এলিসকে আজও রাগবির জনক হিসেবেই দেখা হয়। বিশ্বকাপ রাগবির যে ট্রফি রয়েছে সেটার নামও ওয়েব এলিস ট্রফি।
ছবি : সংগৃহীত
ক্লাব পর্যায়ে রাগবি এবং বিভাজন
ক্লাব পর্যায়ে রাগবি খেলা শুরু হয় ১৮৪৩ সনের দিকে। কিংস কলেজ লন্ডনের বর্তমান মেডিকেল শাখা গাইজ হসপিটালে সে বছর রাগবি স্কুলের বেশ কিছু ছেলে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিল। সেখানে তারা গাইজ হসপিটাল ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে। এ ক্লাবটি যেকোনো ধরনের ফুটবলের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বপ্রথম ক্লাব বলে নিজেদের দাবি করে। যদিও পরিপূর্ণ সংরক্ষিত রেকর্ডসহ পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন ফুটবল ক্লাব হিসেবে ইউনিভার্সিটি অব ডাবলিস- ট্রিনিটি কলেজের ফুটবল ক্লাবটিকেই ধরা হয়। এই ক্লাবটি ১৮৫৪ সনে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৮ সনে প্রতিষ্ঠিত লন্ডনের ব্ল্যাকহিথ রাগবি ক্লাব অবিশ্ববিদ্যালয়ীয় ক্লাব হিসেবে বিশ্বের সর্বপ্রাচীন।
ছবি : সংগৃহীত
১৮৬৩ সনের ২৬ অক্টোবর লন্ডনে ফুটবলের আইন প্রণয়নের জন্য দ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) গঠন করা হয়। সে সময় রাগবিকে ফুটবলেরই অংশ ধরা হতো। কিন্তু এফ এ বেশ কিছু আইন যা রাগবির সঙ্গে সম্পর্কিত, বাতিল করলে ব্ল্যাকহিথ ক্লাব এফ এ ছেড়ে বের হয়ে আসে এবং যারা রাগবিধর্মী ফুটবল খেলে তাদের নিয়ে রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন গঠন করে। সে বছর থেকেই আমরা যেটাকে ফুটবল বলি সেটার নামকরণ করা হয় অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল।
ছবি : সংগৃহীত
১৮৭৯ থেকে ১৮৮২ সন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের কিছু ক্লাবের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হয়। পরবর্তীতে আইন প্রণয়ন নিয়েও মতভেদ দেখা দিলে রাগবি ইউনিয়ানের মধ্যেই ভাঙনের শব্দ জোরালো হয়ে উঠে।
ছবি : সংগৃহীত
১৮৯৫ সনের ২৯ আগস্ট ইয়র্কশায়ারের জর্জ হোটেলে এক মিটিং-এর মাধ্যমে উত্তর ইংল্যান্ডের ২০টি ক্লাব অফিসিয়ালি আলাদা হয়ে যাবার ঘোষণা দেয় এবং নর্দার্ন রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন গঠন করে। পরবর্তীতে এই সংস্থাই রাগবি ফুটবল লিগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং জন্ম দেয় রাগবির আরেকটি ধারার। যদিও রাগবি ইউনিয়নের মতো রাগবি লিগ অতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।
ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক রাগবি
১৮৭১ সনের ২৭ মার্চ প্রথম আন্তর্জাতিক রাগবি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরাতে। ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যকার সেই খেলায় স্কটল্যান্ড আন্তর্জাতিক রাগবির ইতিহাসে প্রথম বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ১৮৮৪ সনে ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যকার একটি খেলায় রেফারি কর্তৃক কারচুপির অভিযোগে ইংল্যান্ডের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর সম্পর্কের অবনতি ঘটতে শুরু করে।
ছবি : সংগৃহীত
এরই রেশ ধরে ১৮৮৬ সনে ইন্টারন্যাশনাল রাগবি বোর্ড গঠন করা হলে সেখানে ইংল্যান্ড যোগ দেয়নি। এই বোর্ডই রাগবির সর্বোচ্চ সংস্থা এবং এর মূল কাজ আইন প্রণয়ন এবং রাগবির আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব। সংস্থাটি আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে অবস্থিত। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস এই সংস্থার তিন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রতিষ্ঠার সময় ইংল্যান্ড যোগদানে অসম্মতি জানালেও চারবছর পর তারা মত পরিবর্তন করে সদস্যপদ গ্রহণ করে।
ছবি : সংগৃহীত
বর্তমানে রাগবির সুপার পাওয়ারগুলোর মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ড। এ ছাড়া আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনা শক্তিশালী দল হিসেবে বিবেচিত হয়।