শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫,
৭ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: ফের পিএস বিতর্কে আসিফ      ভাগ পেতেন ডিসি-এসপিরাও      রাজস্ব খাতের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞরাই      ইতা‌লির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির ঢাকা সফর বাতিল      সাগর-রুনির পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হলো রাজউকের প্লট      মহানবী (সা.) এর সিরাতই তরুণদের চরিত্র গঠনের রোল মডেল: ধর্ম উপদেষ্টা       নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য জরুরি      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
জুলাই অভ্যুত্থান; পাল্টে দিয়েছিল হিসাব-নিকাশ
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া
প্রকাশ: বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৫ পিএম

দীর্ঘ ১৭ বছরের এক ব্যক্তির শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশের জনগণ যখন মুক্তি চাচ্ছিল, যখন আমি-তুমি ডামি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক মারা হলো ঠিক তখনই অন্ধকারের মাঝে আলো নিয়ে এলো আমাদের দেশের তরুণ সমাজ, ছাত্রসমাজ। ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান, পাল্টে দিয়েছিল সব হিসাব-নিকাশ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৭ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে এ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। শেখ হাসিনা স্বৈরশাসকের মতো দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেল। শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও সরকারের দমন পীড়ন, হত্যা, নির্যাতনে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। কোটা আন্দোলন পরিণত হয় সরকার পতনের আন্দোলনে। রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তৈরি করেছিল। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের পরপর তিনটি নিয়ন্ত্রিত ও একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ক্রমশ নিজের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে একচেটিয়া কর্তৃত্ব কায়েম করে সব রকমের বিরোধী মত ও কার্যক্রম কার্যত রুদ্ধ করে দেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, গায়েবি মামলা ইত্যাদি আইনি-বেআইনি নিষ্পেষণে দেশ ত্রাসের রাজত্বে পরিণত হয়। বিরোধী মতের প্রকাশ হয়ে ওঠে অপরাধ, গণমাধ্যম নজিরবিহীন আক্রমণের শিকার হয়, রাজনৈতিক নিগড়ে বাধা পড়ে বিচারব্যবস্থা।

দীর্ঘ ১৭ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যখন ফ্যাসিবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে দেশের সব স্তরের মানুষকে এক কাতারে আনতে পারলো না সেখানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মাত্র একমাস আন্দোলন আর রক্তপাতের পর পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। জয়ী হয় ছাত্র-জনতা। এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যহীন দেশের স্বপ্ন দেখা শুরু করে দেশের মানুষ।

ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে সক্ষম হলেও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এখনো সম্ভব হয়নি। ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ ঘটাতে না পারলে জুলাই অভ্যুত্থানের অর্জন ছিনতাই হয়ে যেতে বাধ্য। আর তা যদি ছিনতাই হয়ে যায় তাহলে সমগ্র জাতিকে কঠিন মাশুল দিতে হবে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন মানেই ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার পতন নয়। ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করতে হলে, জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে ফ্যাসিবাদী আদর্শের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
 
জুলাই। মাসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে, যা গত জুলাইয়ের পূর্বেও আলোচনায় ছিল না। জুলাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কারণ, জুলাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব, জনগণের নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন। এ জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই পতন ঘটে ১৭ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের। গত বছরের আজকের এ দিনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে এক উত্তপ্ত জুলাইয়ের গল্প। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের শুরু হয়েছিল এ জুলাইয়ে। অকুতোভয় ছাত্র-জনতা, শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স সব ভেদাভেদ মুছে দিয়ে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিল। জাতির সম্মিলিত প্রতিরোধ নাড়িয়ে দিয়েছিল স্বৈরশাসকের ভিত্তিমূল। যার ফলে আজকের এ জুলাই, একটি নতুন সূর্য।

বাঙালি জাতির ইতিহাসে অনেক অনন্য বীরত্বের সংগ্রাম ও সংগ্রামের বিজয় অর্জন করতে পারার ইতিহাস রয়েছে। যা অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বের। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সে ইতিহাস একই সঙ্গে অর্জিত বিজয় ধরে রাখতে না পারারও ইতিহাস রয়েছে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অভূতপূর্ব বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারার পরও মানুষের মাঝে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সেসব কারণেই সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মাঝে নানা রাজনৈতিক বিষয়, এ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনাকল্পনা, আলাপ-আলোচনার শেষ নেই। সেসব বিষয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয় ঐক্য।
 
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দানা বাঁধে গত বছরের এ জুলাইয়ে। পরে এ জুলাই মাসেই রংপুরের তরুণ প্রাণ আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পথ ধরে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, মজুরসহ শত শত মানুষ শাসকের বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দাঁড়ানোর নজিরবিহীন সাহস প্রদর্শন করেন। বিরলতম সেই আত্মত্যাগে বিজয়ী হয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, জনজোয়ারে ভেসে যায় ক্ষমতার দম্ভ। সৃষ্টি হয় নতুন এক বাংলাদেশের।

আমাদের দেশে ইতিহাসে আপেক্ষিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়। সেটিই ছিল জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কার্যকর জাতীয় ঐক্য। ফলে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে এড়িয়ে, অবহেলা করে, কিংবা তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে কোনো জাতীয় ঐক্য হলে তা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ১৯৭১ পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জুলাই ২৪-এ ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।

আমাদের সবাইকেই মনে রাখতে হবে, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ প্রকৃতভাবেই ছিল একটি জনযুদ্ধ। সেটি নিছক কোনো কোনো মাস্টারমাইন্ডের পরিকল্পনার ফসল ছিল না। সেটি ছিল না কেবল একটি ৯ মাসের সামরিক অপারেশন। তা ছিল বছরের পর বছর, দশকের পর দশক ধরে পরিচালিত গণমানুষের অসংখ্য গণসংগ্রামের সফল পরিণতি। ৯ মাসের অসীম সাহসী সশস্ত্র যুদ্ধ ছিল তার শীর্ষ অধ্যায়। এ লড়াই কোনো ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ কার্যকলাপ ছিল না, তা ছিল বিশ্বব্যাপী চলতে থাকা ‘জাতীয় মুক্তি আন্দোলন’-এর ধারায় পরিচালিত এক অনন্য সংগ্রাম। ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ছিল ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা—স্বপ্ন অধরাই ছিল জনগণের কাছে। ফ্যাসিবাদী শাসক দেশকে বিপথে পরিচালিত করেছে। জনমনের দুঃখ-বেদনা ক্রমেই পুঞ্জীভূত ক্ষোভে পরিণত হয়। তাদের মনে প্রশ্ন জাগে-কোথায় গেল প্রত্যাশিত গণতন্ত্র, সৌভ্রাত্র, জাতীয় আত্মমর্যাদা, সাম্যের চিন্তা ও বোধ? কেন আজও নেই ভাতকাপড়, রুটি রুজি, শিক্ষা-চিকিৎসা-কর্মসংস্থান-বাসস্থানের নিশ্চয়তা। এমনকি কোথায় গেল মানুষের ভোটের অধিকার? ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে ক্রোধান্বিত জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। বহুদিন ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বারুদের মতো জমা হয়ে বিস্ফোরণের জন্য একটি ম্যাচের কাঠির আগুনের অপেক্ষায় ছিল মাত্র। কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল সেই ম্যাচের কাঠি। তা ছিল বিস্ফোরণ ঘটার একটি উপলক্ষ্য মাত্র। কোটা না হলে অন্য কোনো উপলক্ষ্য ধরে হলেও এই বিস্ফোরণ ঘটতই।
 
যখনই কোনো ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান হয়, তখন চেতনাগত দিক থেকে সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষটিও এগিয়ে আসে, মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে যায় বুক খুলে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেও ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে থাকা নানা রকম রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ সমবেত হয়েছিল এক বিন্দুতে। যা ছিল ‘একক ইস্যু’ভিত্তিক সম-অভিমুখী সংগ্রামের ঘটনা। তা ছাড়া নেতৃত্বও ছিল আগে থেকে জানাশোনার বাইরের তাৎক্ষণিকভাবে গড়ে ওঠা সত্তা। কিন্তু জাতীয় ঐক্য তো বটেই, এমনকি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক ঐক্যও কোনো নির্দিষ্ট ‘সাধারণ কর্মসূচি’ ছাড়া হয় না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এসব উপাদান অনুপস্থিত ছিল অনেকটাই। এবারের আন্দোলনকারী ছাত্র নেতৃত্ব নিজেদের পরিচয় দিয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’ হিসেবে। এ ক্ষেত্রে ভুলে গেলে চলবে না যে সমাজে শ্রেণিবিভাজন ও শ্রেণিবৈষম্য প্রকট। ব্যাপক জনগণের কাছে বৈষম্যবিরোধিতার অর্থ অন্যরকম। দেশের মানুষ বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে স্বপ্ন দেখছিল এই আন্দোলনে সেই মৃত স্বপ্ন আবার পুনর্জীবিত হয়ে ওঠে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নে জনগণ আন্দোলনের সঙ্গে একীভূত হয়ে ওঠে।

২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের ঠিক এক বছর পরের জুলাইয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের চেতনে কিংবা অবচেতনে প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির এক ধরনের হিসাব-নিকাশের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ এক বছর চলে গেলেও আমরা আজও কি আমরা এ সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছাতে পারিনি, শেখ হাসিনার পতন আমরা কেন চেয়েছিলাম? পতনপরবর্তী সময়ে আমাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? ভবিষ্যতে এ ধরনের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ফিরে আসা প্রতিরোধ করার জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পেরেছি কি আমরা?

দেশবাসীর সামনে এ মুহূর্তের প্রধান একটি কাজ হলো গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় সংহত করা এবং সেই বিজয় যেন হাতছাড়া না হয় তা নিশ্চিত করা। বিদ্রোহী কবির ভাষায় বললে—‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় শুধু ভাত-একটু নুন’। আমরা গণতন্ত্র চাই, ফ্যাসিবাদের অবসানও চাই-এসব কথা ষোলো আনা সত্য। কিন্তু চাল-ডালের দাম বাড়ে কেন? বাজারে গেলে জিনিসপত্রের দাম শুনে শূন্য হাতে ফিরে আসতে হয় কেন? আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না কেন? কে এখনো বিদেশে অর্থ পাচারের কথা শোনা যায়? কেন ঘুষ-দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, স্বজন প্রীতি এখনো কমে নাই? জনজীবনের এই জরুরি সমস্যাগুলো নিরসনের পথ দেখাতে না পারলে মানুষ হতাশ হবে। পতিত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার তার সুযোগ নেবে। তারা মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আবারও আমাদের বিজয়কে হাতছাড়া করার অপচেষ্টা করতে পারে।
 
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির প্রসঙ্গেই গত এক বছরে ‘সংস্কার’ একটি বহুলশ্রুত শব্দে পরিণত হয়েছে। সত্যি বলতে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব মেলানোর ক্ষেত্রে সংস্কারই সম্ভবত এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় মানদণ্ড। যারা খুবই গভীর, বিস্তৃত সংস্কারের পক্ষে খুব কঠোরভাবে অবস্থান নিয়েছেন, তারা প্রায়ই বলেন, ‘জনগণ সংস্কার চায়।’ নিজের চাওয়াকে জনগণের নামে বলার প্রবণতা এ মাটিতে অনেক পুরোনো। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য রয়েছে। তবে বিভেদ রয়েছে সংস্কারের ব্যাপ্তি ও ধরন নিয়ে। সেটারই চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। বলা বাহুল্য, এটা দেখেই অনেকে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েছেন।

হাজার হাজার আন্দোলনকারীর আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসকের বিদায় হলেও জনগণের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ এখনো অধরাই রয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের জুলাই অভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত না হলে আবারো নতুন ফ্যাসিবাদ ও লুটরাগোষ্ঠী জনগণের কাঁধে চেপে বসার আশঙ্কা রয়েছে। বৈষম্য বিলোপের স্লোগান তুলে হাজার হাজার মানুষের জীবনের বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছে জনগণ, সেই স্বপ্ন ক্রমেই অধরা হয়ে উঠছে। গণঅভ্যুত্থান নিয়ে এখন এক ধরনের ব্যবসা শুরু হয়েছে বলে দেশবাসী মনে করছে। অসংখ্য নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে, মামলাবাজির নামে নানা ব্যবসার কথা শোনা যাচ্ছে, মব সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজে নানা বিভক্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে, আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এগুলো সবই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এক বছরেই দেশে ক্রমান্বয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তার মধ্যে নতুন ফ্যাসিবাদের আগমন ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। পুরো সমাজের মধ্যে আবার একটা নতুন ফ্যাসিবাদী শক্তির নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে এখনই প্রতিবাদ করতে হবে। তা না হলে গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ছিনতাই হয়ে যেতে পারে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেখানে জনগণ একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর স্বপ্ন দেখেছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। জুলাইয়ে শুরু হওয়া সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের আজ্ঞাবহতা বর্জন করে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে ফিরে আসতে বাধ্য করতে হবে।

ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে সক্ষম হলেও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এখনো সম্ভব হয়নি। ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ ঘটাতে না পারলে জুলাই অভ্যুত্থানের অর্জন ছিনতাই হয়ে যেতে বাধ্য। আর তা যদি ছিনতাই হয়ে যায় তাহলে সমগ্র জাতিকে কঠিন মাশুল দিতে হবে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন মানেই ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার পতন নয়। ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করতে হলে, জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে ফ্যাসিবাদী আদর্শের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট, রাজনীতিক কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

কেকে/এএম
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ফের পিএস বিতর্কে আসিফ
ভাগ পেতেন ডিসি-এসপিরাও
রাজস্ব খাতের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞরাই
কুমিল্লায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে যুবক নিহত
খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শ্বশুরের বিরুদ্ধে পুত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

সর্বাধিক পঠিত

মদনে স্ত্রীর নির্যাতন মামলায় সাবেক কমিশনার গ্রেফতার
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কৃষি সংস্কার ও খাদ্য নিরাপত্তার অভিযাত্রা
জয়পুরহাটে বজ্রপাতে আলু ব্যবসায়ীর মৃত্যু
‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস
জামালপুরে পূবালী ব্যাংকের সহযোগিতায় আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close