বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ককে ফের সক্রিয় করা হবে মন্তব্য করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
বৃহ্স্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।
বিএনপির পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি হিসেবে ‘আমাদের বন্ধু থাকবে, প্রভু থাকবে না’ নীতিটির ওপর তিনি জোর দেন এবং জানান যে, এই নীতি অনুসরণ করে বিএনপি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করবে।
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি সার্কের উদাহরণ টেনে বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা আঞ্চলিক আলাপ-আলোচনা ও সমাধানের একটি মঞ্চ। তবে, তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার সার্ককে অকার্যকর করে একটি দেশকে (ভারত) প্রাধান্য দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সার্ককে পুনরায় সক্রিয় করবে এবং এর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করবে।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি দায়িত্বশীল ও অভিজ্ঞ দল হিসেবে দেশের সংকটময় মুহূর্তে সঠিক বার্তা দিয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকা অবস্থায় তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দেশের অস্থির পরিস্থিতিতে মানুষকে আশ্বস্ত করেন। বিশেষ করে ৫, ৬, ৭ ও ৮ তারিখের অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের প্রতি মানুষের ঘৃণা ও হামলার ঘটনায় তারেক রহমান ঐক্যের ডাক দিয়ে সব রাজনৈতিক দল ও দেশের মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।
এ্যানি আরো বলেন, গত ১৭ বছরের ‘দুঃশাসন’ সত্ত্বেও, তারেক রহমানের দূরদর্শিতায় দেশে বড় ধরনের কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তারেক রহমানের প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও সম্মানের মূল কারণ এটাই, এবং এই আস্থা থেকেই বিএনপি ভরসা করে যে আগামীদিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকার ‘রক্তচক্ষু’ দেখিয়ে শুধু বিএনপি নয়, দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষকে ঘায়েল করেছে, যার ফলে দেশের রাজনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং স্বাভাবিক রাজনৈতিক চর্চার কোনো সুযোগ ছিল না। ২০১৪ সালে ভোটের কোনো পরিবেশ ছিল না, ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে ভোট হয়েছে এবং ২০২৪ সালে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নির্বাচন করা হয়েছে। তার মতে, স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ কখনোই প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী ছিল না।
শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলকে গণতান্ত্রিক ও উন্নয়নমুখী হিসেবে তুলে ধরেন শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান নিজের হাতে অস্ত্র ধরে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন, তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করেছেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন। আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের সূচনা হয়। জিয়াউর রহমান বা খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে কোনো ফ্যাসিবাদ, কর্তৃত্ববাদ বা স্বৈরাচারী মনোভাব ছিল না।
তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির চলমান আন্দোলন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর বর্তমান সরকারও সংস্কার নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য হচ্ছে বলে এ্যানি উল্লেখ করেন। তিনি জানান, বিএনপির ৩১ দফা অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ‘১০ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবে না’ তারেক রহমানের এই প্রস্তাবটির প্রশংসা করে এ্যানি এটিকে দেশের জন্য তারেক রহমানের রাজনৈতিক ও চিন্তাভাবনার ফল বলে উল্লেখ করেন।
নিজের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, গত ১৭ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে তাকে সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে প্রস্তুত থাকতে হতো এবং গ্রেফতারের ভয়ে থাকতে হতো। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাজিরা দিতে গেলেও, এখন আর পালাতে হয় না। আজকেও তিনটি মামলায় হাজিরা এবং একটিতে সাক্ষ্য দিতে তিনি আদালতে গিয়েছিলেন বলে জানান।
তিনি তার ছাত্র রাজনীতি ও এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের কথা স্মরণ করে বলেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় কারফিউ জারি হলে তিনি ডাকসুর মেম্বার ছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের চাবি তার হাতে দেওয়া হয়েছিল, যাতে প্রশাসন হামলা চালাতে না পারে। তিনি জানান, সেদিন ভোরে প্রশাসন পুরো ক্যাম্পাস ঘেরাও করে ফেলেছিল।
মিট দ্য প্রেসে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকন। সঞ্চালনা করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। এ সময় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কেকে/এএম