চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতারা বিদেশ পালিয়ে গেছে। সেখানে ফুরফুরে জীবন কাটালেও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে দেশে থাকা ত্যাগী কর্মীরা। বর্তমানে অসহায় ও দুর্ভোগে চলছে তাদের জীবন সংসার। আত্মগোপনে থাকা এসব কর্মীদের দিন কাটছে অর্ধাহারে ও অনাহারে। এমন পরিস্থিতিতে নেতাদের পাশে পাবার আশা তাদের।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বদানকারী প্রথম সারির নেতারা জুলাই আন্দোলনে সরকার পতনের পর একে একে দেশ ছেড়েছেন। যেখানে কারো আশ্রয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে, আবার কারো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে ও কারো কারো দুবাইতে। অনেকেই ভিসা নিয়ে উন্নত দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে নেতারা পালালেও দেশ ছাড়েননি তৃণমূলের ত্যাগী কর্মীরা। বিভিন্ন মামলায় নাম থাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন তারা।
ত্যাগী কর্মীরা বলছেন, সংসারের চুলো জ্বালানো এখন তাদের স্বপ্নের মতোই। নেতাদের দলের মিছিলে লোক দেখানোর জন্য তাদের প্রয়োজন হতো। নেতারা এখন সবাই পলাতক। ত্যাগীরা মামলা খেলেও কেউ খোঁজ নেয়নি তাদের। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আক্ষেপ নিয়ে তারা আরো বলেন, সবার সঙ্গে মিলেমিশে রাজনীতি করেছি। কিন্তু সরকার পালানোর পর কেউ কোনো যোগাযোগ রাখেনি। এখন আমাদের শুধুই হতাশা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর দল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু নেতাকর্মীদের দেখা গেলেও একের পর এক মামলার ভয়ে সবাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাফুর রহমান কোথায় আছেন কেউ জানেন না। দলের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে সম্প্রতি আবুধাবীতে অবস্থান করছেন এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সঙ্গে দেখা গেছে আরেক প্রভাবশালী নেতা হুসেইন মুহাম্মদ আবু তৈয়বকে। সম্প্রতি তৈয়ব-নাজিমের এই ভিডিও সবাইকে বিস্মিত করেছে। আরেক নেতা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম কোথায় আছেন কেউ জানেন না। অনেকের দাবি তিনি দেশের এক ক্যান্টনমেন্টে আত্মগোপনে রয়েছেন। দলের সাবেক সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনির অবস্থান কেউ নিশ্চিত নন। অনেকের দাবি তিনি চট্টগ্রাম শহরেই আছেন।
কেউ কেউ বলছেন মধ্যপ্রাচ্যে কোনো এক দেশে লোকিয়ে আছেন। তার চাচা ফখরুল আনোয়ার কারাভোগের পর অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। ওমরা করতে যাওয়ার সময় ফটিকছড়ি পৌর মেয়র আলহাজ ইসমাঈল হোসেন বিমান বন্দর থেকে গ্রেফতার হন। তিনি এখনো কারাগারেই রয়েছেন। সৈয়দ মোহাম্মদ বাকের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে আছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বাকি বহু নেতাও রয়েছেন দেশের বাইরে কিংবা দেশের বিভিন্ন স্থানে কৌশলে আত্মগোপনে।
ত্যাগী নেতাকর্মীরা জানান, ‘এই খারাপ সময়ে পরিবার নিয়ে অভাবে অনেকটা হতাশায় তারা। অনেকের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, মারধর, সম্পত্তি দখল এবং নানা সংকটে তারা চরমভাবে দিন কাটাচ্ছে। সংকটময় পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছেন। কবে নাগাদ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন তা নিয়ে দিশাহীন এসব নেতাকর্মীরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আ.লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অসহায় ও নিরাপত্তাহীনতায় এবং অধিকাংশ সময়ই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন। এমনকি অনেকে বাড়িতে পর্যন্ত আসতে পারছেন না। কারো সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। এটি বড়ই কষ্টের। দুর্ভাগ্য আমাদের। নেতারা বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন আমোদ ফূর্তিতে।
তৃনমূল পর্যায়ের এসব নেতাকর্মীরা আরো জানান, অনেকের নামে মামলা হয়েছে। গ্রেফতার অব্যাহত আছে। তৃণমূলে যাদের মামলা হয়েছে তাদের অর্ধিকাংশের একাধিক, কারো নামে তিন-চারটি। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা অনেকেই জীবিকার প্রয়োজনে নিরুপায়। প্রকাশ্যেও আসতে পারছেন না। প্রকাশ্যে এলে মামলা হতে পারে, এই ভয়ে আত্মগোপনে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তাছাড়া হামলার ঝুঁকিও আছে। আরো কতদিন চলবে, তাও জানেন না। সহসা সংকট কাটবে, এমন আশাও নেই। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে হতাশায় তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন তৃনমূল নেতা বলেন, ‘দলের দুই-একজন সিনিয়র নেতা কখনও কখনও হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারাও সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারছেন না। সংকট কত দিনে কাটবে, তারা সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেন না।
বিপদগ্রস্ত নেতার্মীদের অনেকে তাদের করুণ পরিস্থিতির জন্য দলের প্রভাবশালী নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে যারা দেশ ছেড়েছেন তারা সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন বলে বিপদে থাকা কর্মীরা মনে করছেন। কিছু নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মাঝে মাঝে যোগাযোগ, খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করলেও অনেকেই রাখেন না। এসব কারণে অনেকেই পালানো নেতাদের ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ।
বিদেশে থাকা এক নেতা ম্যাসেঞ্জারে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার ভরসা দিতে দেশের বাইরে এসেছি। তাদের প্রতি নির্দেশ হলো, যে যেখানে আছো, তোমরা সেখানকার নেতা। সেইভে থাকো। কারো নির্দেশের দরকার নাই। সুদিন আমাদের আসবেই।’
কেকে/এএস