চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য জোবেদা খানম রেখা ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন। ভাতার কার্ড, সনদে স্বাক্ষরের নামে ঘুস আদায়, ভিজিডি চাল বিতরণে অনিয়ম ও চাল চুরির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সুন্দরপুর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবি, জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি টাকার বিনিময়ে নাগরিক সেবা দিচ্ছেন। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড, ভিজিডি কার্ড ও ওয়ারিশ সনদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা নিতে হলে তাকে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। সেবার কোনো কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিতে গেলেই তিনি (রেখা) টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে স্বাক্ষর করেন না। এমনকি সেবা গ্রহীতাকে অপমানজনক আচরণও করেন। এমন অভিযোগ শুধু একজনের নয়, অনেকেই এই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান।

জানা যায়, আওয়ামী সরকারের পতনের পর ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ, ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জানে আলম ও ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ কামাল আত্মগোপনে চলে গেলে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন জোবেদা খানম রেখা। ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে তিনি দরিদ্রদের হক থেকে বঞ্চিত করে টাকার বিনিময়ে সুবিধাভোগীদের সেবা দিচ্ছেন। যারা এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছেন  তাদেরই উল্টো মামলার ভয় ও হুমকিধমকির শিকার হতে হচ্ছে। জনপ্রতিনিধির এই ধরনের আচরণে ইউনিয়ন পরিষদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন মানুষ। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

শুধু সনদ বা কার্ড নয়, গত ঈদুল আজহার আগে ভিজিএফের চাল বিতরণেও তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি চাল প্রকৃত গরিবদের না দিয়ে আত্মীয়স্বজন বা অর্থ প্রদানকারীদের মধ্যে বিতরণ করেন তিনি।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুজা উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জোবেদা খানম রেখা মেম্বার সুকৌশলে চাল চুরি করেছেন। সবদিকে জানাজানি হলে তা একদিন পর উপকার ভোগীদের মাঝে বিতরণ করেন।’

৮নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রবাসী জাবেদ বলেন, ‘আমি একটি ওয়ারিশ সনদের জন্য আবেদন করেছিলাম। আবেদনপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার সময় আমাকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এরপর মূল কপিতে স্বাক্ষর নিতে গেলে তিনি আবারও ১ হাজার টাকা চেয়ে বসেন। মানুষ বাধ্য হয়ে তাকে টাকা দিতে হয়।’

৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মহিন উদ্দিন জানান, ‘আমি হাটহাজারীতে থাকি ব্যবসার কারণে। ওয়ারিশ সনদ প্রয়োজন হলে রেখা মেম্বারের কাছে যাই। তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেন। আমি টাকা দিয়েছি, কিন্তু অনেকদিন হয়ে গেলেও সনদ পাইনি। ফোন দিলে তিনি বলেন টাকা ফেরত দিবেন, কিন্তু এখনও কিছুই হয়নি।’

পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মতি সওদাগর জানান, ‘আমি একটা বয়স্কভাতার কার্ড করাতে চেয়েছিলাম। রেখা মেম্বারের সঙ্গে ৫ হাজার টাকায় চুক্তি করি। শুরুতে ৫০০ টাকা দেই, বাকি কার্ড হাতে পেলে দিতাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্ড পাইনি।’

সব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য জোবেদা খানম রেখা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি কারো থেকে টাকা গ্রহণ করিনি। আমি কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নই।’

সুন্দরপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা ইউপি সদস্য রেখার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম পেয়ে তাকে সতর্ক করেছিলাম। তিনি কোনো কথা কর্ণপাত করেন না।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ইউপি সদস্য জোবেদা খানম রেখার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে শোকজ করা হয়েছে। ৩ দিনের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কেকে/এএস