নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় চিকিৎসকের অবহেলায় বেবি আক্তার(২৮) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৫ জুন) সকালে তাদেরকে গ্রেফতার করে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত শনিবার উপজেলা শহরের জনতা ক্লিনিকে ওই প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বড়গাছা দরগাপাড়া গ্রামের মো. নূর আলমের স্ত্রী। এঘটনায় রোববার সকালে প্রসূতির স্বামী নূর আলম বাদী হয়ে ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক, নার্সসহ ছয় জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওই মামলায় চিকিৎসক মো. নাজমুস সাকিব, সেবিকা সুমনা আক্তার ও সাবিয়া আক্তারকে গ্রেফতার করে দুপুরে আদালতে সোপর্দ্দ করে।
এদিকে এ ঘটনায় রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শায়লা সাঈদ তন্বী ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রায়হান বারী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেন।
অভিযোগ মতে, গত শনিবার বিকালে প্রসব বেদনায় ডোমার উপজেলা শহরের জনতা ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয় বেবি আক্তারকে। সেখানে সন্তান প্রসবের জন্য সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ওই প্রসূতির সিজার করা হয়। সিজারের পর প্রসূতির পুত্র সন্তান সুস্থ থাকলেও প্রসূতি মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও শ্বাসকষ্ট জনিত অসুস্থতা বাড়তে থাকে। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে সিজার করা চিকিৎসক রিজওয়ানা ইয়াসমিন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ক্লিনিকের অপর চিকিৎসক নাজমুস সাকিবকে দ্বায়িত্ব দিয়ে ক্লিনিক ত্যাগ করেন। রাতে আবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক নাজমুস সাকিব ওই রোগীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রংপুরে ভর্তি করা হলে রোববার ভোরের দিকে বেবি আক্তারের মৃত্যু হয়।
বেবি আক্তারের স্বামী নূর আলম বলেন, প্রসব বেদনা নিয়ে পরিবারের লোকজনসহ শনিবার বিকালে আমার স্ত্রীকে ডোমারের জনতা ক্লিনিকে নিয়ে আসি। সেখানে মহিলা ডাক্তার রিজওয়ানা ইয়াসমিনকে দেখালে তিনি কিছু পরীক্ষা দেন। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর ডাক্তার জরুরী সিজার করাতে বলেন (প্রসূতির)। তার পরামর্শ অনুযায়ী সন্ধ্যায় সিজারের পর থেকেই রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সিজারের তিন ঘণ্টা পার হলেও রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। এ বিষয়ে ডাক্তার কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। চিকিৎসকের অবহেলায় আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রায়হান বারী বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্লিনিকটি সীলগালা করা হয়েছে। এখনো লিখিত অভিযোগ না পেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্লিনিকটির কোন অনুমোদন নেই বলে জানান তিনি।
ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোহসীন আলী বলেন, এ ঘটনায় রোববার সকালে নিহতের স্বামী মো. নূর আলম বাদী হয়ে ডোমার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত চিকিৎসক মো. নাজমুস সাকিব, সেবিকা সুমনা আক্তার ও সাবিয়া আক্তারকে গ্রেফতার করে দুপুরে আদালতে সোপর্দ্দ করা হয়েছে। নিহত বেবি আক্তারের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার অপর আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
কেকে/এজে