কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পূর্ব পাটুলীতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে সুনীল চন্দ্র দাসসহ স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এ সময় বাধা দিলে জমির মালিক ইকবালসহ কয়েকজনকে সাক্ষীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন সুনীল চন্দ্রদাসের লোকজন। এ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের ভয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জমির মালিক মুহাম্মদ সোহাগ ইবনে নূর বাজিতপুর থানায় বাদী হয়ে দুইজনসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে অভিযুক্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্তরা—উপজেলার পূর্ব পাটুলী এলাকার মৃত নরেন্দ্র চন্দ্র দাসের ছেলে সুনীল চন্দ্র দাস (৬০) ও একই এলাকার আক্কল আলীর ছেলে জিয়াউল হক (৩০)।
অভিযোগ ও মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, ১৯৬০ সালে উপজেলার দিঘীরপাড় বস্তি মৌজার ১৬৮৫নং খতিয়ানে ২ একর ৬ শতাংশ ও ২৯৬৪নং খতিয়ানে ৬৯১১নং দাগে ৯১ শতাংশের কাত ৪৬ শতাংশ জমি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয় মুহাম্মদ সোহাগ ইবনে নূর ও তার ৪ সহোদর ভাই। জমিগুলো ভোগদখলে থাকাকালীন বিগত ৬ বছর পূর্বে উক্ত দাগের জমিগুলো ব্যবসার উদ্দেশে দীঘিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্রয়াত চেয়ারম্যান আমিন মুহাম্মদ ফারুক ও খায়রুল ইসলামকে ৩ বছরের জন্য উক্ত জায়গা চিহ্নিত করে বাংলা চৌহদ্দি (উত্তরে-রাস্তা, দক্ষিণে-শাহজাহান, পশ্চিমে-খাইরুল ও পূর্বে-নদী) অনুযায়ী ভাড়া দেয় মুহাম্মদ সোহাগ ইবনে নূর। পরবর্তীতে ভাড়ার মেয়াদ সম্পূর্ণ হলে জমিগুলোতে নিজেই স্টিলের নৌকা মেরামত, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ ও ইট-বালু, পাথরের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
গত ১৪ মে দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে অভিযুক্তরা জমিগুলো নিজেদের দাবি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ জমিগুলো দখলের চেষ্টা চালায় এবং মুহাম্মদ সোহাগ ইবনে নূরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এর আগে গত ৪ মে কিশোরগঞ্জ অতিরিক্থ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মুহাম্মদ সোহাগ ইবনে নূর বাদী হয়ে দশজনকে বিবাদী করে ফৌ.কা.বি ১৪৪/১৪৫ ধারায় একটি মোকাদ্দমা দায়ের করা হয়।
সে মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, উক্ত দাগের ১৩ শতাংশ জায়গা ভুলক্রমে পার্শ্ববর্তী দাগের মালিক কৃষ্ণ ধন দাস, সুনীল চন্দ্র দাস ও দীপক চন্দ্র দাসের নামে লিপিবদ্ধ হয়। সেই ভুল রেকর্ডকে কেন্দ্র করে বিবাদী পক্ষ বাদী পক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরাতে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কৃষ্ণ ধন দাস বলেন, পাটুলী ঘাটের সব জায়গা আমার বাপ-দাদার। সোহাগের বাবা নূরুল ইসলাম ১৯৮৩-৮৪ সালে যখন মাঠ রেকর্ড জরিপ হয় তখন সরকারি সার্ভেয়ারদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে জায়গাগুলো তাদের নামে মাঠ রেকর্ড করে নেয়। এখন তার ছেলে জাল কাগজপত্র দিয়ে আমাদের নামে ১৪৪ ধারা জারি করছে । আমরা মামলার জবাব দেবো।
এদিকে কৃষ্ণ ধন দাসের আপন চাচা বীরেন্দ্র নাথ বলেন, এ দাগের পাশে আমারও জমি আছি। সোহাগের পূর্ব পুরুষগণ এই জমিতে চাষাবাদ করত। পরে তারা মারা গেলে ধারাবাহিকভাবে এ সম্পদের মালিক হয় তারা। সোহাগের বাবা ছিলেন ডাক্তার। আশপাশে আরো অনেক সম্পদ তিনি কিনেছেন। কৃষ্ণ এ দাগে কেমনে জমি দাবি করবে? সিএস আরওআর সোহাগের বাপ-দাদারে নামে হেরা মুসলমান আর সে হিন্দু।
বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুরাদ হোসেন বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এএম