ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ঘটে গেলো এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। লাশবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি করে স্বজনদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুধু তাই নয়, তারা মৃত ব্যক্তির মরদেহেও আঘাত করেছে। এ অমানবিক ঘটনায় শোকে স্তব্ধ পুরো এলাকা।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের তিলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ঢাকা থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার পথে ডাকাতরা সড়কে গাছ ফেলে পথরোধ করে। এরপর অস্ত্রের মুখে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা স্বজনদের মারধর করে, লুট করে নগদ প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা ও ১০টির বেশি মোবাইল ফোন। হামলায় নারীসহ অন্তত ৯ জন আহত হন। এর চেয়েও মর্মান্তিক হলো—ডাকাতদের আঘাত থেকে রেহাই পাননি মৃত ছবদর আলীর মরদেহও।
স্বজনরা জানান, উপজেলার মুকবুলপুর গ্রামের বাসিন্দা ছবদর আলী দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত আহসানিয়া ক্যান্সার হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। রাতেই পরিবারের সদস্যরা তার মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন শেষ বিদায় জানানোর জন্য।
কিন্তু ভাগ্য যেন তাদের সে সুযোগটুকুও দিল না। তিলপাড়া এলাকায় পৌঁছতেই ওৎ পেতে থাকা সশস্ত্র ডাকাতরা সড়কে গাছ ফেলে অ্যাম্বুলেন্সের পথ আটকায়। মুহূর্তেই তারা গাড়িটি ঘিরে ফেলে, ভাঙচুর চালায় এবং মরদেহের সঙ্গে থাকা ৯ জন স্বজনকে বেধড়ক মারধর করে। তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল লুটে নেয়। এমনকি মৃত ব্যক্তির শরীরেও আঘাত করে, যা শুধুমাত্র অমানবিক নয়—মানবতারও চরম লঙ্ঘন।
এ ঘটনায় হতবাক ও শোকার্ত পরিবার। নিহত ছবদর আলীর ছেলে ও স্থানীয় বিএনপির পূর্বভাগ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আলমগীর মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘টাকা-পয়সা, মোবাইল নিয়ে গেছে—আমরা তা নিয়েও কিছু বলিনি। কিন্তু আমার মৃত বাবার লাশের ওপরে যে এভাবে হামলা চালাবে, তা কোনোভাবেই কল্পনাও করতে পারিনি। তারা যেন মানুষ না, যেন জানোয়ার।’
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম জানান, ঘটনাস্থলটি পূর্ব থেকেই অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। অতীতেও সেখানে ডাকাতির একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেছি।’
স্থানীয়দের মতে, এমন নৃশংস ঘটনা শুধু এক পরিবার নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি জাগরণের বার্তা। মানবতা যখন মৃতদেহেও হামলা করে, তখন সমাজের মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে—তা ভেবে কাঁপছে এলাকাবাসী।
কেকে/ এমএস