কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় রেকর্ডসংখ্যক পশু প্রস্তুত করেছেন খামারি ও পশুপালকেরা। তবে স্থানীয় চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পশু এবং সমবায় সংকটের কারণে গরু বিক্রি ও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে ৯ হাজার ৭৫০টি পশুর, কিন্তু খামার ও বাড়িতে প্রস্তুত রয়েছে ১৬ হাজার ৭৭২টি গবাদিপশু—চাহিদার চেয়ে প্রায় ৭ হাজার ২২টি বেশি। এসব পশুর আনুমানিক বাজারমূল্য ১০২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
প্রস্তুত গবাদিপশুর মধ্যে রয়েছে ৫ হাজার ৮৯৪টি গরু, ৩১২টি মহিষ, ৯ হাজার ১৫০টি ছাগল, ১ হাজার ৩৭০টি ভেড়া ও ৪৬টি অন্যান্য পশু। গত বছর চাহিদা ছিল ৭ হাজার ৮৫০টি, প্রস্তুত হয়েছিল ১৪ হাজার ৭৫টি।
খামারি সাইদুর রহমান জানান, তিনি এবার দেশি জাতের ২৫টি গরু লালনপালন করছেন। গরুকে খাবার হিসেবে কাঁচা ঘাস, খৈল, ভুট্টা এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়াচ্ছেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ বেড়েছে তার। কয়েকদিন পরই বিক্রির জন্য এসব গরু বাজারে তোলা হবে বলে জানান তিনি।
জোড়খালী ইউনিয়নের ফুলজোড় এলাকার তোফায়েল হোসেন মতি বলেন, কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য ৫টি দেশি গরু প্রস্তুত করছি। কয়েক বছর আগে করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশি জাতের গরু পালন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। তবে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কোরবানির গরুর ন্যায্য দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
এদিকে উপজেলার শতদল সমবায় সমিতির কয়েকজন পরিচালক প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সমিতির প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
এক ভুক্তভোগী জানান, সমিতিতে তার ১০ লাখ টাকা আটকে থাকায় এবার কোরবানি দেওয়া সম্ভব নয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিজভী আহমেদ বলেন, উপজেলার খামারি ও কৃষকদের গবাদিপশুকে দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভিটামিনও খাওয়াতে বলা হয়েছে। তবে গবাদিপশুকে নিষিদ্ধ রাসায়নিক ও হরমোনের ওষুধ খাওয়াতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে মানসম্মত মাংস উৎপাদন করবে, সে বিষয়ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, চলতি বছর এই উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৯ হাজার ৭৫০টি। চাহিদার বিপরীতে ১৬ হাজার ৭৭২ পশু প্রস্তুত রয়েছে। যা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কেকে/এএম