তিস্তা নদীতে তেমন কোনো পানি প্রবাহ না থাকলেও শুষ্ক মৌসুমেই রংপুরের গঙ্গাচড়ায় দেখা দিয়েছে তিস্তার ভাঙন। এতে গত দুই মাসে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ৫০ একর ফসলি জমি।
উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ গ্রামে ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার চলমান ভাঙনে একের পর এক বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। গত দুই মাসে উঠতি ফসল ভুট্টা, গম ও মিষ্টি কুমড়াসহ অন্তত ৫০ একর ফসলি জমি ও ১০ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে।
শংকরদহ এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হামার (আমার) আর কিছু নাই বাহে, আগের বার বাড়ি ভাঙি গেইছে। মাইনেষর জমিত বাড়ি করি আছি। এবার হামার আবাদি জমি কোনাও ভাঙি গেল। ভুট্টা গাড়ছেনো (রোপণ), সেই ভুট্টাও নাই, পুরাট (পরিপক্ব) হইতে হইতে নদীত ভাঙি যাওয়া শুরু হয়েছে।’
কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ২ মাস থাকি ভাঙেচোল। বাবা, এগলা (এগুলো) দেখার হামার কায়ো (কেউ) নাই।
কী আর করমো, হামার কপালোত দুঃখ লেখি রাখছে। হামার নদী বান্দীও (বেঁধেও) কায়ো দেয় না। হামার শীত বর্ষা কী সউগ (সব) সময় নদী ভাঙে।”
ইউপি সদস্য রমজান আলী জানান, শংকরদহ গ্রামে প্রায় ৪৫০ পরিবারের বাস ছিল। কয়েক বছরে বন্যাসহ তিস্তার ভাঙনে সব হারিয়ে পরিবারগুলো এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বাকি ছিল প্রায় ৮০ পরিবার, অসময়ে নদীভাঙনে গত দুই মাসে প্রায় ১০ পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। চোখের সামনে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ফসলের ক্ষেত।
লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, অব্যাহত ভাঙনে শংকরদহ গ্রামটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ভাঙন এসে ঠেকেছে রংপুর-কাকিনা সড়কের প্রায় ৩০০ মিটার দূরে। এখনি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে আসন্ন বর্ষায় হুমকিতে পড়বে সড়কটি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, সরেজমিনে দেখার পর ভাঙন রোধের ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, গঙ্গাচড়ার শংকরদহ এলাকায় অসময়ে তিস্তার ভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে ভাঙনরোধে কাজ শুরু হবে।
কেকে/এএস