প্রকৃতিতে ফিরেছে গ্রীষ্মকাল। বছর শুরুর এই ঋতু মৌসুমি নানা ফলের পাশাপাশি পুষ্পপল্লবেও জানান দিচ্ছে নিজের উপস্থিতি। বাংলার প্রকৃতিতে সোনালু যেভাবে শোভা ছড়িয়ে চলেছে, তেমনি দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। সোনালুর সোনার আভায় সেজেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ। রাঙাচ্ছে মানুষের মন। এ ছাড়া দিনে মহাসড়কের সৌন্দর্যবর্ধন এবং রাতের বেলায় বিপরীত দিকের গাড়ির হেডলাইটের আলো যেন চালকের চোখে না পড়ে এ জন্য বিভাজকে বিভিন্ন ধরনের গাছ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ১০৫ কিলোমিটার অংশ পড়েছে কুমিল্লা জেলায়। এ মহাসড়কের দেখা গেছে, গাছের শাখা ছাপিয়ে ঝুমকার মতো ঝুলে আছে সোনালু। হলুদ সোনালুর অপরূপ শোভায় মন ছুঁয়ে যাবে যে কারো। মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম, মিয়ার বাজার, দাউদকান্দি, চান্দিনা, সদর দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন অংশে শত শত গাছে সোনালু ফুল ফুটে রয়েছে। ফুলের সৌরভ আর মনমাতানো রঙে আকৃষ্ট হচ্ছেন চলাচলকারীরা।
দীর্ঘ একটা পথ চলাচলের সময় সোনালুর এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যাত্রী ও চালকদের বিমোহিত করার পাশাপাশি ক্লান্তি নিমিষেই ভুলিয়ে দেয় বলে জানান চালকরা। মহাসড়কের সৌন্দর্যবর্ধন এবং রাতের বেলায় বিপরীত দিকের গাড়ির হেডলাইটের আলো যেন চালকের চোখে না পড়ে এ জন্য বিভাজকে বিভিন্ন ধরনের গাছের পাশাপাশি ফুলগাছ রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে হলুদ সোনালু ফুটে থাকায় মহাসড়কের সৌন্দর্য বেড়েছে। চলাচলের সময় মানুষ মুগ্ধ হচ্ছেন।
লাভ ফর বাংলাদেশ টুরিজম ক্লাবের সভাপতি মীর মফিজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার অংশে বিভিন্ন প্রজাতির যে ফুলগাছগুলো লাগানো হয়েছে তা সত্যি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সারা বছর জুড়ে একেক সময় একেক ফুল ফুটে। আমরা যারা এই সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করি আমাদের কাছে এটা দেখতে অনেক বেশি ভালো লাগে। মনটা জুড়িয়ে যায়। এ সুন্দর কাজের জন্য অবশ্যই সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এমন সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সবসময় যেন চলমান থাকে এবং নিয়মিত পরিচর্চা করা হয়। তিনি দাবি করেন, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফুলবাগানের মতো যেন সারা দেশের মহাসড়কগুলোতে এমন সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়। যাতে স্বস্তিতে যাত্রী ও চালকরা চলাচল করতে পারে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কুমিল্লার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আদনান ইবনে হাসান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এ মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ফেনীর শুরু পযর্ন্ত ১০৫ কিলোমিটার কুমিল্লা সড়ক বিভাগের আওতায়। মহাসড়কের পুরোটা সড়ক বিভাজন জুড়ে আমরা বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগিয়েছি। গ্রীষ্ম বর্ষা হেমন্ত বসন্ত বিভিন্ন ঋতু অনুযায়ী ফুল গাছগুলো লাগানো। ফলে সারা বছর এই এ মহাসড়কে কোনো না কোনো ফুল ফুটে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ঢাকার তীব্র যানজট কাটিয়ে এসে যখন যাত্রীরা এ সড়কে প্রবেশ করে তখন তাদের ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়— মহাসড়কের নান্দনিক মনোমুগ্ধকর ফুলের সৌন্দর্য দেখে। এ ফুলগুলো দেখে তারা প্রশান্তি পাই। মহাসড়কের সৌন্দর্যবর্ধন ও রাতের বেলায় বিপরীত দিকের গাড়ির হেডলাইটের আলো যেন চালকের চোখে না পড়ে এ জন্য বিভাজকে বিভিন্ন ধরনের গাছের পাশাপাশি ফুলগাছ রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে সোনালু ফুটে থাকায় মহাসড়কের সৌন্দর্য বেড়েছে। চলাচলের সময় মানুষ মুগ্ধ হচ্ছেন। আমরা ভবিষ্যতে আরো ফুল গাছ লাগানোর পাশাপাশি এগুলোর পরিচর্যা করাসহ আরো সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কাজ করব।
কুমিল্লা-ঢাকা সড়কের হানিফ পরিবহনের বাসের চালক মো. মনির মিয়া বলেন, এ মহাসড়কে আগে এত সুন্দর ছিল না। ছিল না এমন ফুল বাগান। বর্তমানে এসব বাগানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নান্দনিক ফুল ফুটে। যা দেখে আমাদের অনেক ভালো লাগে। এ সড়ক দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় আমাদের সকল ক্লান্তি যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। এত ফুল দেখতে দেখতে চোখের তন্দ্রাচ্ছন্নভাব চলে যায়। দেশের বিভিন্ন সড়কে আমরা গাড়ি চালাই, কিন্তু এই সড়কের মতো সুন্দর আর কোথাও দেখিনি।
এশিয়া লাইনের বাস চালক রফিক বলেন, এ মহাসড়কের ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি দিনের বেলায় আর রাতের বেলায় এ বাগান গুলো থাকার কারণে বিপরীত পাশ দিয়ে আসা গাড়িগুলোর হেডলাইট এর আলো থেকে আমাদের মুক্ত রাখে। ফলে অনেক দুর্ঘটনা থেকে আমরা বেঁচে যাই। সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় আমাদের অনেক যাত্রীদের অনুরোধে আমরা গাড়ি থামাই, পরে তারা এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে। কেউ ছবি তোলেন, কেউ ভিডিও করেন। সেটা দেখতে আমাদেরও ভালো লাগে।
কেকে/এএম