ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভাগ করে নিই খুশি

অমিত কুমার কুণ্ডু
🕐 ৬:৩৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২২

ভাগ করে নিই খুশি

কি রে লাটু, কেমন আছিস?
লাটু লেজ নাড়ছে। লেজ নাড়তে নড়তে উপর দিকে তাকাল। মুখে তুলে বলে উঠল, ভালো নেই রে মটু।
কেন, কী হলো? মটু বড়দের মতো বলে উঠল।

লাটু এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে একটা ময়লার বালতি। নোংরা, খালি। লাটু বলে উঠল, করোনা এসেছে শহরে। শুনেছিস তো?
মটু দোতলায়। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। মটু ঘাড় দোলাল। ঘাড় দুলিয়ে বলল, শুনেছি রে। দু’দিন হলো। আমিও ঘরে আছি। বাইরে করোনা। এখন কেউ বাইরে যায় না। আমিও যেতে পারি না। সারাদিন বাড়িতে থাকি। কেমন লাগে বল তো!
তুই তো ঘরে মটু। জানি খারাপ লাগছে। তবুও তো খেতে পারিস। আমি যে খাবার পাই না। না খেয়ে মরে গেলাম যে।
কেন? এখন খাবার পাস না কেন?
লাটু লেজ নাড়িয়ে বলল, না রে, পাই না। কোথাও খাবার নেই। করোনা তো। মানুষ ঘর থেকে বের হয় না। আগের মতো বাইরে হাঁটে না। যেখানে সেখানে খাবারও ফেলে না। খাবার পাব কোথায়? এই দেখ না। রোজ সকালের খাবার এখানে পাই। তোর এখানে। এই যে, এই বালতিতে। কিছু না কিছু পেয়েই যাই। আজ বালতি খালি। শুধুই হাড়গোড় পড়ে আছে। দুটো ভাত নেই। হাড়ে একটু মাংস নেই। খাবার মতো কিছুই নেই রে। দুই দিন ধরে এভাবে চলছে। খেয়ে না খেয়ে। কোনোমতে দিন কাটছে। কী করি বল তো মটু?
মটু কিছু একটা ভাবল। ঘরে চলে গেল। একটু পরে বেরিয়ে এল। ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল। লোহার ফাঁক দিয়ে তাকাল।
সুচাল মুখ বের করে দিল। বাইরে। লাটুর দিকে। এবার বলল, দাঁড়া লাটু। আমার কিছু খাবার আছে। আজ সকালের। আমি এখনো খাইনি। অনেক খাবার দিয়েছিল তো। আমার দেশ থেকে আনা। তোরা যাকে বিদেশ বলিস। সেই বিলেতি খাবার। কথাটা বলে, মটু একটু গোঁফে হাসল।
আবার বলা শুরু করল, আমি আর কত খাব বল! হাঁটাচলা নেই। বাসায় শুয়ে বসে আছি। সকালে এত খেতে ভালো লাগে? খাবার রয়ে গেছে তো। তোকে দিই। তুই বসে বসে খা। পেট ভরে খাবি।
মটুর কথা আদর মাখানো। চোখে বড় মায়া। বড় আপন করে নেয় মটু। লাটুর চোখে জল চলে এল। এই না হলে খেলার সাথী! নিজে না খেয়ে আমাকে দিল। আমি তো পথেই থাকি। পথেই খায়। তবুও এত মায়া। এত ভালোবাসা। আমার উপর। লাটু নিজেকে পথের ভাবছে। মনে করছে একা। মটু মোটেও সেটা ভাবছে না। লাটু যে মটুর খেলার সাথী। খেলার সাথী কি পর হয়? হয় না। আপন হয়। নিজের লোক হয়। খেলার সাথী ভেবে। আপন ভেবে। নিজের ভেবেই খাবার দিয়েছে মটু। নিজের খাবার। ভাগ করে নিয়েছে খুশি। অনেকদিন পর। পেট ভরে খেল লাটু। সকালের খাবার। খেয়ে একটা ঢেঁকুর তুলল।
একটু পরে ওখানে এল কাক। উড়ে। দূরের গাছ থেকে। এসে গাছের ডালে বসল। কা কা করে ডেকে উঠল। পাশের বাসার ব্যালকনিটা দারুণ। সেখানে ঝুলছিল একটা খাঁচা। খাঁচার ভেতর একটা কোকিল। বসে আছে। মনের সুখে। কুহু কুহু ডাকছে। আপন মনে। নিজের খেয়ালে।
কোকিলের গান। কানে গেল কাকের। কাকের রাগ হলো। আরও জোরে কা কা করে উঠল। কোকিলের দিকে তাকিয়ে বলল, সকালে খাবার পায়নি। না খেয়ে শুকিয়ে আছি। আর তুই কুহু কুহু করিস। গান শোনাস। পাজি কোথাকার! তোর সাথে আড়ি! কাকের মুখ ভার হয়ে গেল। মুখ সরিয়ে নিল। কোকিলের দিক থেকে। পাশের গাছটির দিকে তাকাল।
কোকিল কুহু কুহু গান থামাল। গলা উঁচু করে বলল, রাগ করিস কেন? আমি কি বুঝতে পেরেছি? তুই আজ খাবার পাসনি? এখানে আয়। এই ব্যালকনিতে। উড়ে এসে একটু বোস তো পাশে। আমি খাঁচা থেকে খাবার দিই। আমরা একসঙ্গে খাব। সকালের খাবার। তুই বাইরে বসে খাবি। আমি ভেতরে বসে খাব। দুজন মিলে। কত মজা হবে বল তো! আমার তো কত ফেলা যায়। খাঁচার ভেতর থাকি। উড়তে পারি না। কোনো কাজ করতে পারি না। খাবার খুঁজতে হয় না। কত খাব বল?
কোকিলের কথা শুনল কাক। কাকের রাগ পড়ে গেল। সে উড়ে এল। ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল। মেঝের উপর। কোকিল কিছু খাবার ঠেলে দিল। খাঁচার পাশ দিয়ে। খাবার এসে পড়ল মেঝেতে। কাক খাবার পেল। খেয়ে নিল সবটা। কোকিল আরেকটু খাবার দিল। এবারও খেয়ে নিল সবটা। কোকিল আবার খাবার দিল। নিজের খাবার। যেটা নিজে খাবে ভেবে রেখেছিল। সেই খাবার। কাক খেয়ে নিল সবটা। একটা ঢেঁকুর তুলল। কাকের পেট ভরে গেছে। কাকের মুখে হাসি। মনের সুখে গান ধরল। কা কা। কা কা।
এবার কোকিল হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল, কি কাক ভাই? এখন তো দেখছি তুমিও! গান গাইতে পার! পেট জুড়িয়েছে তো? কথা ক’টা বলে কোকিল হাসল! হা হা হা হা!
কাকও হেসে উঠল। হো হো হো হো। দুজনের হাসি শোনা গেল একসঙ্গে। কা কা। কা কা। কুহু কুহু। কুহু কুহু।

 
Electronic Paper