লাল সবুজের পতাকা
মাহমুদুল হাসান মুন্না
🕐 ১:৩৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
ইস্টিশনের ছেলে আনন্দলাল। নামে আনন্দ থাকলেও তার জীবনে আনন্দ নেই। রেল ইস্টিশন চত্বরে বড় হয়েছে। একদল পথশিশুর সঙ্গে বসবাস। কেউ তাকে আনন্দ নামে ডাকে না। বন্ধুরা লাল বলেই ডাকে। আর ভদ্রলোকেরা টোকাই বলে। পথশিশু লাল কারও ভালোবাসা পায়নি।
ভাগ্যে জুটেছে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য। লালের বন্ধু সবুজ। সেও পথশিশু। তারা একসঙ্গে চার বছর কাটিয়েছে। সারাদিন প্লাস্টিকের বোতল ও কাগজ কুড়ায়। সন্ধ্যায় বিক্রি করে অল্প কিছু টাকা পায়। তা দিয়ে ডালভাত খেয়ে দিন চলে যায়। লাল ও সবুজ কখনোই ভিক্ষা করেনি। পথশিশু হলেও তাদের আত্মসম্মানবোধ আছে।
ইস্টিশনের পাশেই পথশিশুদের জন্য একটি স্কুল আছে। কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিদিন বিকেলে পাঠদান করে। লাল ও সবুজ সময় পেলে স্কুলে যায়। তারা স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় দিবস সম্পর্কে জেনেছিল। সেই থেকে তাদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়।
১৬ ডিসেম্বর। বিজয় দিবস। ইস্টিশনের অদূরে বড় মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। সেখানে হাজার মানুষের সমাগম। অনেকের হাতে দশ টাকা দামের পতাকা। মঞ্চে বিশিষ্টজনরা বসলেন। বিজয়ের ইতিহাস নিয়ে বক্তব্য দিলেন। সবাই একসুরে দেশের গান গাইলেন। লাল ও সবুজ একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা দেখল হাতে থাকা পতাকা কিছুক্ষণ পরে কেউ কেউ পতাকা বিছিয়ে উপরে বসেছে। এ দৃশ্য দেখে তাদের খুব খারাপ লাগল। অনুষ্ঠান শেষে সবাই চলে গেল। তারা পতাকাগুলো কুড়িয়ে নিল।
বিকেলে লাল, সবুজ ও তাদের সঙ্গের সবাই ইস্টিশন চত্বরে সমবেত হলো। সবার হাতে দশ টাকা দামের পতাকাগুলো। সবুজ বড় পতাকাটি বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে উড়িয়ে দিল। হাওয়ায় দুলছে লাল সবুজের পতাকা।
আনন্দলাল বলল, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই পতাকা পেয়েছি। আজ প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমরা কখনোই এর অসম্মান করব না। একাত্তরের শহীদ ভাইদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সবুজ বলল, আমরা পাথশিশু, আমরাও সুনাগরিক হব। দেশকে ভালোবাসব। কখনো অন্যায় কাজ করব না। দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখব।
এরপর তারা জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল। সমস্বরে জাতীয় সংগীত গাইল। ইস্টিশন চত্বরে মুখরিত হলো 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।' নির্মল বাতাসে উড়তে থাকল লাল সবুজের পতাকা।
হাতিয়া, নোয়াখালী
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228