ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তিমি কোনো মাছ নয়

সানজিদা আকতার আইরিন
🕐 ২:২৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৪, ২০২১

তিমি কোনো মাছ নয়

সাজিদের বড় মামা বেড়াতে এসেছে বলে তার আনন্দের শেষ নেই আজ। তাই কিছুতেই মন বসে না ক্লাসে। তার উপর কবিতা ম্যাডাম কী এক অদ্ভুত চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দিলেন, সাজিদ ভেবেই কূল পায় না।

 

সাধারণ জ্ঞান পড়াতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তিমি কোনো মাছ নয়’। কিন্তু কেন মাছ নয় তা বলার সুযোগ পাননি তিনি। ঘণ্টা পড়ে যাওয়ায় অন্য দিন বলবেন বলে চলে গেলেন। তবে এই অদ্ভুত কথা জানার জন্য ব্যাকুল সাজিদের কৌতূহলী মন। আমরা বলি তিমি মাছ আসলে সে মাছ কেন নয়?

ছুটির পরে কতক্ষণে মামার দেখা পাবে সেই ভাবনা তাকে অস্থির করে তোলে। সাজিদের সব প্রশ্নের জবাব কেবল বড় মামার কাছেই আছে, এমন ধারণা তার। আজ ছুটি হতেই চায় না যেন। বাড়ি ফিরে মামার কাছে সাজিদ জানতে চায়, ‘তিমি মাছ নয় কেন, মামা?’

মামা খুশি মনে ভাগ্নেকে বুঝিয়ে বলেন, মাছের যেমন ডিম থেকে পোনা হয় তিমির কিন্তু তেমন হয় না। তিমি বাচ্চা প্রসব করে। এরা ‘কর্ডাটা’ পর্বের ‘সিটাসিয়া’ বর্গভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী। আর এরা স্তন্যপায়ী বলেই এদের মাছ বলা যায় না। এছাড়াও তিমির শ্বাস নেওয়ার জন্য ফুসফুস আছে। যা অন্য মাছের নেই। মাছেরা ফুলকা দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করে। তিমির নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য বেশি অক্সিজেনের দরকার হয়।

তখন তিমি পানির উপরে ভেসে ওঠে আর তাদের বিশাল নাসারন্ধ্রের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে। মাছের ফুলকা আছে তাই ফুলকা দিয়ে পানি থেকে দ্রবীভূত অক্সিজেন ছেঁকে নেয় কিন্তু তিমি তা পারে না। কারণ তিমির ফুসফুস আছে তাই এরা পানির উপরে ভেসে ভেসে বায়ু থেকে অক্সিজেন সংশ্লেষণ করে। তারা প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর্যন্ত শ্বাস না নিয়ে থাকতে পারে।

এমনকি এরা ঘুমায়ও স্তন্যপায়ীদের মতো। তবে শ্বাস নেওয়ার জন্য তাদের কিছুক্ষণ পরপর ভাসতে হয় বলে খুব বেশি নিদ্রা সুখ উপভোগ করা সম্ভব হয় না তাদের। তবে অনেকের মতে তিমির মস্তিষ্কের দুটি অংশ পালা করে ঘুমায়। তাই কখনই পুরোপুরি ঘুমন্ত থাকে না।

সাজিদের চোখ বড় বড় হয়ে ওঠে- ‘কী বলো মামা? এমনটা হতে পারে?’
মামা হেসে বলে ওঠেন, ‘অনেকে তো তাই অনুমান করছে। এরা এক চোখ খোলা রেখে ঘুমায়, তাই এমন মনে করা হয়। তিমি দীর্ঘ সময় পর পর বাচ্চা দেয় আর এদের প্রায় এক বছর থেকে দুই আড়াই বছর পর্যন্ত বাচ্চা লালন পালন করে। শিশু তিমি প্রায় ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে। আর তিমির দুধ টুথপেষ্টের মতো জমাট বাঁধা।’

অবাক হয়ে সাজিদ মামার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কী অবাক করার কথা! পানিতে থাকে মাছের মতো দেখতে অথচ মাছ নয়?
মামা বলেন, ‘আরও কারণ আছে। শোনো ভাগ্নে, মাছ শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী। আর তিমি উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী। পরিবেশের সাথে মাছের রক্তের তাপমাত্রা ওঠানামা করে। কিন্তু বরফ শীতল পানিতেও এদের রক্ত গরম থাকে। তুমি কি জানো, সবচেয়ে বড় তিমি কোনটি?’
সাজিদ সাধারণ জ্ঞানের বইয়ে পড়া উত্তরটি হড়বড় করে বলে ফেলে, ‘নীল তিমি, মামা।’

মামা খুশি হয়ে বলেন, ‘ঠিক বলেছ। এছাড়াও আছে খুনি তিমি, পাইলট তিমি, বেলুগা তিমি, হাম্পব্যাক তিমি, এন্টার্কটিক তিমি, ফিন তিমি গ্রে তিমিসহ আরও অনেক তিমি। একটি পূর্ণাঙ্গ নীল তিমি এক শ’ ফুটেরও বেশি লম্বা। এবং ওজন প্রায় দুই শ’ টন বা দুই লক্ষ কেজির মতো। পুরুষ তিমিকে বলা হয় ষাঁড়, মেয়ে তিমিকে বলা হয় গাভী আর শিশু তিমিকে বলা হয় বাছুর। নীল তিমির বাছুর প্রতিদিন ৫০০ লিটারেরও বেশি দুধ পান করে। এসব কারণে তিমি কখনই মাছ নয়।’

সাজিদ অবাক হয়ে মামার দিকে তাকিয়ে ভাবে, কত অদ্ভুত এই প্রাণিজগত। আর আমরা কত অল্পই তার জানি। কবিতা ম্যাডামের কথার পুরোপুরি অর্থ এতক্ষণে তার কাছে পরিষ্কার হলো। তিমি আসলে কোনো মাছ নয়, জলজ স্তন্যপায়ী বিশাল এক প্রাণী।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper