ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গ্রামবাংলার সেই কুপি বাতি ও হারিকেন

শাহ আলম, গোয়াইনঘাট (সিলেট)
🕐 ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২১

গ্রামবাংলার সেই কুপি বাতি ও হারিকেন

অনেকটাই হারিয়ে গেছে গ্রামবাংলার জনপ্রিয় কুপি বাতি ও হারিকেন। রাতের অন্ধকার দূর করতে গ্রাম-বাংলায় অন্যতম ভরসা ছিল কুপি বা হারিকেন তথা কেরোসিন বাতি। মফস্বলের অনেকেই পড়ালেখা করেছেন কুপি বা হারিকেনের মৃদু আলোয়। গৃহস্থালী ও ব্যবসার কাজেও এসব ছিল একমাত্র অবলম্বন।

চলচ্চিত্রের প্রথম আমলের ছবিগুলোতে দেখা যায় সিনেমার নায়িকা তার ভালোবাসার মানুষটিকে অন্ধকার রাতে খুঁজে পেতে হারিকেন নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন। আবার বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ‘ডাক হরকরা’ গল্পের নায়ক তার এক হাতে হারিকেন আর অন্য হাতে বল্লম নিয়ে রাতের আঁধারে ছুটে চলেছেন কর্ম পালনে। কিছু দিন আগের কথা, বাহারি ধরনের কুপি ও হারিকেন ছিল মানুষের অন্ধকার নিবারণের অবলম্বন।

কালের বিবর্তনে কুপি বাতি ও হারিকেনের স্থান দখল করে নিয়েছে বৈদ্যুতিক বাল্ব, সৌরবিদ্যুৎ, চার্জার লাইটসহ মোমবাতি আরও অনেক কিছুই। ফলে ক্রমেই বিলীনের পথে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যময় এ নিদর্শনটিও। জানা যায়, সন্ধ্যা হলেই গ্রামীণ জনপদে প্রতিটি বাড়িতেই এক বা একাধিক সংখ্যক কুপি বাতি বা হারিকেন থাকত। সন্ধ্যা এলেই সবার আগে মনে পড়ত হারিকেনের কথা। গৃহস্থালীর সব কাজ সেরে বাড়ির বৌ-ঝিরা সন্ধ্যার আগেই হারিকেনের কাচ মুছে তাতে কেরোসিন ভরে জ্বালিয়ে দিত প্রতি ঘরে ঘরে। অন্ধকার হওয়ার পূর্বেই সবার বাড়িতে শোভা পেত কুপি বা হারিকেনের আলো।

ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে রাতের যাবতীয় কাজকর্ম চলত কুপির আলোয়। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে অনেক সহজলভ্য ইলেকট্রিক উপকরণগুলো তৈরি করছেন।

এরমধ্যে অন্যতম ইমারজেন্সি লাইট, চার্জার লাইট, এলইডি লাইট, আইপিএস, সোলার প্যানেলসহ বিভিন্ন উপকরণ। এগুলো বর্তমান বাজারে কম দামে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে মানুষ বিকল্প হিসেবে এসব জিনিস ব্যবহার করে থাকেন। ফলে কেরোসিনের কুপিবাতি ও হারিকেনের চাহিদা উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে।

এই কুপি ও হারিকেনগুলো ছিল বাহারি রঙের। এর মধ্যে মাটি, লোহা, কাচের বোতল আবার পিতলের তৈরি কুপিও ছিল। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী লোকজন কুপি ও হারিকেন কিনে সেগুলো ব্যবহার করত। নষ্ট হলে মেরামত করে দিতেন কারিগররা। তার একটি নামও ছিল ‘টাটারু’। হারিকেন বিলুপ্তের সঙ্গে সঙ্গে সেই কারিগরদেরও আর দেখা যায় না। হারিকেন অনেকটা এখন ফটোফ্রেমে বন্দি।

দু-একটি বাড়িতে কুপি বাতি বা হারিকেন দেখা মিললেও সেটি আর জ্বলে না। এখন গৃহবধূদের হারিকেনের কাচ মুছে হাতে কালি লাগাতে হয় না। লাইটের সুইচ টেপা মাত্রই ঘর ভরে যায় আলোয়। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের অনেকেই হারিকেন নামও জানে না। হারিকেন দেখে পরবর্তী প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বড়দের কাছে জিজ্ঞেস করবে এটা আবার কী? কী কাজে লাগে ইত্যাদি।

আসামপাড়া গ্রামের ইলিয়াস শিপু বলেন, হারিকেন ছাড়া রাতে চলা কল্পনাও করতাম না। আমরা পড়ালেখা করেছি কুপির আলো দিয়ে। বাজারে যেতাম হারিকেন নিয়ে। ঘরের একমাত্র আলো ছিল কুপি আর হারিকেন। কুপি ও হারিকেন ছাড়া জীবন ছিল অচল। এখন কুপি বা হারিকেন দেখা যায় না। সুইচ টিপলেই আলো জ্বলে।

 
Electronic Paper