ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে যা বলছে ইসলাম

অনলাইন ডেস্ক
🕐 ১২:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ০৩, ২০২৩

শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে যা বলছে ইসলাম

সম্পদের সার্বভৌমত্ব ও মালিকানা আল্লাহর। মানুষ এই সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক মাত্র। ইসলামী আদর্শে মালিক ও শ্রমিক সবাই ভাই ভাই। শ্রদ্ধা-স্নেহ, সৌহার্দ ও বিশ্বস্ততায় ভরপুর তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক। নিজ নিজ কর্তব্য পালনে শ্রমিক ও মালিক উভয়কে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা ইসলামের নীতি।

শ্রমিকের প্রতি মালিককে যেমন সহানুভূতিশীল হতে হবে, একইভাবে কর্মীদের ন্যায়নিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন আদর্শ কর্মীর সাতটি বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হলো—

অফিসের সম্পদের সুরক্ষা- রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান বা অফিসের সম্পদ অর্পণ করা হয় কর্মীদের হাতে। কর্মীদের দায়িত্ব এসব সম্পদ রক্ষা করা। কারণ এসব সম্পদের ব্যাপারে পরকালে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, তোমাদের সবাই দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে তার অধীন বিষয়ের জন্য জিজ্ঞাসিত হবে। (সহিহ বুখারি: ৫১৮৮)

গোপনীয়তা রক্ষা করা- প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ভর করে ওই প্রতিষ্ঠানের কিছু নিজস্ব নীতি ও কৌশলের ওপর। ইসলাম কর্মীদের এ কৌশল ও নীতিমালা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে গোপন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষত যখন এর সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা জড়িত থাকে। একান্ত অপারগতা ও সামগ্রিক কল্যাণ ছাড়া গোপন বিষয় প্রকাশ করবে না।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি কোনো কথা বলার পর আশপাশে তাকালে তার ওই কথা (শ্রবণকারীর জন্য) আমানত বলে গণ্য হবে। (সুনানে তিরমিজি: ১৯৫৯)

সহকর্মীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা- ইসলাম পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হাসিমুখে কথা বলাকেও সদকা হিসেবে গণ্য করেছে। তাই কর্মক্ষেত্রে সবাই সবার সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে কথা বলবে এটাই ইসলামের নীতি। আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। (সুনানে তিরমিজি : ১৯৫৬)

দায়িত্বকে আমানত মনে করা- ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির ওপর অর্পিত দায়িত্ব তার জন্য পবিত্র আমানত। চুক্তি অনুযায়ী শরিয়ত অনুমোদিত এমন দায়িত্ব পালনে ব্যক্তি বাধ্য এবং তা মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব।

ইসলামের নির্দেশনা হলো, আল্লাহর মুমিন কর্মী দায়িত্বকে আমানত মনে করবে এবং তা সংরক্ষণ করবে। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আপনার মজুর হিসেবে সেই উত্তম যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত। (সুরা কাসাস: ২৬)

সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা- কর্মক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, নিজের বন্ধুর সঙ্গে ভালোবাসার আধিক্য প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার শত্রু হবে। তোমার শত্রুর সঙ্গেও শত্রুতার চরম সীমা প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার বন্ধু হবে। (সুনানে তিরমিজি: ১৯৯৭)

নিয়তের বিশুদ্ধতা- হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। (সহিহ বুখারি: ১) তিনি আরও বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের শরীর এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন। (বুখারি: ৫১১৪) সুতারং মুমিন তার প্রত্যেকটি কাজে বিশুদ্ধ নিয়তের অধিকারী হবে। তবেই তিনি পরকালে প্রতিদানের আশা করতে পারেন।

পূর্ণরূপে কাজ করা- মুমিন যখন কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করবে, সে তা পরিপূর্ণ যত্ন ও মনোযোগের সঙ্গে করবে। কোনোভাবেই অবহেলা বা কাজ অসম্পূর্ণ রাখা যাবে না। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ পছন্দ করেন যে তোমাদের কেউ যখন কোনো কাজ করবে সে তা যথাযথভাবে করবে। (সহিহুল জামে: ১৮৮০)

মহান আল্লাহ মালিক ও শ্রমিকের দায়িত্ব যথাযথ পালনের মাধ্যমে একটি সুন্দর কর্মক্ষেত্র গঠন করে যথাযথ দায়িত্ব পালনে সচেতন হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

 

 
Electronic Paper