চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আমন ধান কাটা এখনো পূর্ণদমে শেষ হয়নি। মৌসুম এখন মধ্য পর্যায়ে, পুরোপুরি শেষ হতে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে। এখনো প্রায় ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটেনি কৃষকরা। এমন পরিস্থিতিতে ধানের দাম ক্রমাগত কমতে থাকায় তারা গভীর দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সরকার প্রতি কেজি ধান ৩৬ টাকা এবং প্রতি মণ ১,৪৪০ টাকা নির্ধারণ করলেও রাজশাহীর তালন্দ, কালীগঞ্জ, চৌবাড়িয়া, কলমা ও বিল্লি হাটে কৃষকেরা জানাচ্ছেন বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১,১০০ থেকে ১,১৫০ টাকায়। যা সরকার ঘোষিত দামের তুলনায় অনেক কম।
রাজশাহী কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ মৌসুমে জেলায় ৮৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে, যেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন। গত বছর চাষ হয়েছিল ৮৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৩২৩ মেট্রিক টন।
তানোর উপজেলার দরিয়া গ্রামের কৃষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এখনো অনেক জমির ধান কাটা বাকি। শ্রমিক ও সারের দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম শুনলেই বুক ভেঙে যায়। মণ প্রতি ১,১০০ টাকায় ধান বিক্রি করলে লোকসান ছাড়া কিছুই থাকে না। তবে খড়ের ভালো দাম থাকায় কিছুটা খরচ ওঠে আসছে বলে জানান তিনি।
মোহনপুর উপজেলার কৃষক আব্বাস উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, সরকার ঘোষিত দরে ধান কিনে খুব অল্প পরিমাণে। অনেক সময় ক্রয়কেন্দ্রে আমাদের মতো সাধারণ কৃষকের ধান নেয় না। আর বাজারে ফড়িয়ারা কম দামে ধান কিনে নিচ্ছে। যদি দাম আরও কমে, তাহলে বড় বিপদে পড়ব।
নারী কৃষক সারমিন খাতুনের আশঙ্কা, শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে আবার ধান কাটাও পুরো শেষ হয়নি। বাজারে দাম আরও কমতে পারে এই ভাবনায় দিনরাত দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে।
ধান ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বাড়লেও তারা নগদ টাকার অভাবে বেশি দামে ধান কিনতে পারছেন না। মিল মালিকরাও ক্রয় কমিয়ে দিয়েছেন।
কামারগাঁ বাজারের ধান ব্যবসায়ী মতিউর রহমান মতি বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন কঠিন হয়ে গেছে। মিলগুলোও ধান কম কিনছে। তাই আমরা বেশি দামে ধান কেনার অবস্থায় নেই।
আরেক ব্যবসায়ী রাব্বানী বলেন, ধান কাটার মৌসুম চলছে, সরবরাহ বাড়ছে। কিন্তু নগদ টাকা সংকটের কারণে দাম বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, এখনো জেলার প্রায় অর্ধেক ধান কাটা–মাড়াই বাকি। সরবরাহ বাড়ার কারণে বাজারে প্রভাব পড়ছে। আমরা মাঠপর্যায়ে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
তিনি আরও জানান, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে এবং সরকারি ক্রয় কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কৃষকরা যাতে সহজে ক্রয়কেন্দ্রে ধান দিতে পারেন, সে বিষয়েও নজরদারি করা হচ্ছে।
কেকে/ এমএস